আলেমদের অধিনে স্কুল প্রতিষ্ঠার গুরত্ব ও একটি ছোট্ট ঘটনা

এইচ এম আদিব


২০১৩ সাল পরবর্তী হেফাজত ধরপাকড়ের ইতিহাস মোটামুটি সবারই জানা আছে। ধরপাকড় ছাড়াও ইমামতি খতিবগীরি ও মাহফিলে বাঁধা দেওয়ায় ঘটনা ছিল অগণিত। আমার উস্তাদে মুহতারাম থেকে শুনা একটি ঘটনা এখানে বর্ণনা করব।

ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার কোনো একটি দীনি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মাহফিলকে কেন্দ্র করে। সেই মাদরাসাতে কওমি মাদরাসার তাইসির থেকে দাওরা হাদিস পর্যন্ত থাকার সাথে সাথে স্কুল শাখাও ছিল। অর্থাৎ মাদরাসার উস্তাদদের তত্বাবধানে স্কুলের সিলেবাসে স্কুলের মত করেই ক্লাস ফাইভ বা টেন পর্যন্ত ছিল।

সেই স্কুল শাখাতে সরকারের বাধ্যতামূলক করা বাংলা অংক ইংরেজি সমাজ ভূগোল বিজ্ঞানের পাশাপাশি কুরআন ক্লাস ও বাধ্যতামূলক ছিল। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়া একটা ছেলে সে সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার সাথে সাথে নিজ বাবা মায়ের জানাযা কাফন-দাফন ও ইমামতির যোগ্যতাও অর্জন করে ফেলতো৷

যাক মূল আলোচনাতে যাচ্ছি, সে মাদরাসার মাহফিলে দাওয়াত করা হয়েছিল খুব সম্ভবত তৎকালীন ঢাকা মহানগরী হেফাজতের আমির আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমি রহ.কে। কাসেমি সাহেব রহ. যখন স্টেজে উঠেন তখন মুরব্বী টাইপের আওয়ামিলীগের কয়েকজন লোক বলে উঠেন হেফাজত নেতাকে বক্তিতা করতে দেওয়া হবে না।

তখন সামনের সারি থেকে যুবক বয়সের তরুণ কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে গেলো। তারা বৃদ্ধ আওয়ামিলীগের লোকদের প্রতিবাদ জানালো। বললো “আপনারা আওয়ামিলীগ করেন, আমরাও ছাত্রলীগ করি, রাজনীতির জায়গাতে রাজনীতি, আমরা রাজনীতির জন্য আমাদের ধর্মকে বিসর্জন দিতে পারি না। আপনাদের চেয়ে এই হুজুরদের আমরা তরুণরা ভালোভাবে চিনি, আমরা শৈশবে স্কুলের পাঠ তাদের কাছেই চুকিয়েছি, আমাদের উস্তাদদের আমরা ভালোভাবেই চিনি”।

যাই হোক তক্কাতক্কির এক পর্যায়ে আওয়ামিলীগের মুরব্বিরা চুপ হয়ে যায়। এই যে একটা তরুণ প্রজন্ম আলেমদের হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, তারা কারা? কেনইবা দাঁড়িয়েছে? তারা হলো সেই সকল ছেলেরা যারা এই প্রতিষ্ঠানেই শৈশবে স্কুলে পড়েছিল। তারা হলো সেই সকল ছেলেরা যারা এই উস্তাদদের কাছে শৈশবে কুরআন পড়েছিল। তাদের দিলে তাদের অন্তরে উস্তাদের প্রতি আজমত মুহাব্বত এখনো আছে।

এক পরিবারের সকল সন্তানদের কোনো বাবা-মা ই স্কুলে দিতে পারেন না। আমরা পাঁচ ভাই। আমাদের পাঁচ ভাইকেই মাদরাসায় পড়ানোটা আমার আম্মার শখ ছিল কিন্তু শত চেষ্টা করেও তিনি তা পারেন নি৷ সামাজিক পারিবারিক শত বাঁধা বিপত্তি এড়িয়ে একটা দীনি পরিবারের ও সকল সন্তানদের মাদরাসা পড়ানো যায়নি সেখানে সাধারণ পরিবারের সকল সন্তানদের মাদরাসায় পড়াটা কল্পনা করেন কিভাবে?

২০১৭ সালে PSC পরিক্ষা দিয়েছিল ২২লক্ষ শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে PSC পরিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছিল ২৭লক্ষ। তার মানে প্রায় ৫লক্ষ শিক্ষার্থী এক বছরে বেড়েছে। আর ২০১৭ সালে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকে পরিক্ষার্থী ছিল ৬৫ হাজার। ২০১৮ সালে ছিল প্রায় ৭০ হাজার। (সংখ্যা অল্প কমবেশ হতে পারে) যেখানে সাধারণ শিক্ষায় বছরে ১লক্ষ শিক্ষার্থী বাড়ছে সেখানে আমাদের শিক্ষার্থী বাড়ছে এক হাজার৷ কল্পনা করা যায়? বাকি ৯৯হাজার শিক্ষার্থীর দীন রক্ষার জিম্মাদারি কে নিবে?

বাংলাদেশে নতুন যেই শিক্ষানীতি করা হয়েছে সেই শিক্ষানীতির আউটপুট পুরোপুরি আসবে ৫০ বছর পর৷ আশা করা যায়, এই শিক্ষানীতি ফলপ্রসূ হলে ৫০ বছর পর এই দেশের ৫০% লোক নামে মুসলিম হলে মস্তিষ্ক মগজে নাস্তিক হয়ে যাবে।

দেশের এই বিপুল সংখ্যক মানুষদের নিয়ে আমাদের ফিকির কী? শুধু মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কী দেশের ৯৯ভাগ জেনারেল শিক্ষার্থীদের ঈমান আমলের হেফাজত করা সম্ভব? আপনি জোর করলেও কখনো সব শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় পড়াতে পারবেন না৷ তাহলে আপনারা কেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করছেন না? কেন ৯৯% মানুষের ঈমান আমল নিয়ে চিন্তা করছেন না?

প্রত্যেকটা মাদরাসার সাথেই স্কুল শাখা কেন খুলা যায় না? যারা স্কুলের অন্যন্য শিক্ষার সাথে সাথে দীনের মৌলিক শিক্ষাটাও পেয়ে যাবে। আপনারা যদি দীনি শিক্ষার সাথে সাথে জাগতিক শিক্ষার পরিক্ষায় বেস্ট রেজাল্ট দেখাতে পারেন দেখবেন মানুষ অন্যন্য স্কুল বাদ দিয়ে আপনাদের স্কুল বা মাদরাসায় ভর্তি করাবে৷

বাংলাদেশের মুসলিমরা প্রায় ৯০% এখনো ধর্মপ্রিয় আলহামদুলিল্লাহ। স্কুলে কুরআন শিক্ষা নেই বলে তারা বিভিন্নভাবে সন্তানদের কুরআন শিক্ষা নিয়ে টেনশন করেন। কেউ কেউ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান কেউ কেউ সকালের মক্তবে কুরআন শিক্ষা দেন। আপনারা যদি এমন স্কুলই তৈরি করতে পারেন যেখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার রেজাল্ট ও ঈর্ষণীয় তখন দেখবেন সকল মায়েরা তাদের সন্তানদের আপনাদের স্কুল মাদরাসায় ভর্তি করাতে পাগলপারা হয়ে যাবে। আল্লাহ, এই দেশের আলেম উলামাদের এমন একটি মহৎ উদ্যোগের জন্য কবুল করে নিন।

লেখক, প্রবাসী দায়ী আলেম।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সেই রাতে কী ঘটেছিল পটিয়ায়, প্রত্যক্ষদর্শীর শ্বাসরুদ্ধকর লোমহর্ষক বর্ণনা!

নূর নিউজ

জাতীয় কবি ও আমাদের দায়িত্ববোধ

নূর নিউজ

রোজা ও রমজান: মাওলানা ইউসুফ নূর

নূর নিউজ