ইসরাইলের কারাগার থেকে সুকৌশলে পালিয়েছে ৬ ফিলিস্তিনি

ইসরাইলের উচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত গিলবোয়া কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ বানিয়ে, তা দিয়ে পালিয়েছেন ফিলিস্তিনি ৬ বন্দি। রোববার দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে তারা ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যান। রাত তিনটার দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে স্থানীয় লোকজন সন্দেহজনক লোকজনকে দেখতে পায়। তারা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে এলার্ট করা হয় সংশ্লিষ্টদের। এ কথা বলেছে ইসরাইল প্রিজন সার্ভিস (আইপিএস) কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই ওই ব্যক্তিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। পলাতক ওই গ্রুপে আছেন আল আকসা মার্টিরস ব্রিগেডসের সাবেক প্রথম সারির নেতা জাকারিয়া জুবেইদি। আল আকসা মার্টিরস ব্রিগেডস হলো ফিলিস্তিনের কিংবদন্তি নেতা ও প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের রাজনৈতিক আন্দোলনের নাম।

ওই ৬ ফিলিস্তিনিকে আটকের জন্য পুলিশ ইসরাইলের সেনাবাহিনী এবং আভ্যন্তরীণ শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। মোতায়েন করা হয়েছে স্নাইপার কুকুর। গিলবোয়ার চারপাশে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে।

ওদিকে ইসরাইলের মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, পলাতক ওইসব ব্যক্তি এরই মধ্যে পালিয়ে পশ্চিম তীরে পৌঁছে থাকতে পারেন। ১৯৬৭ সাল থেকে এই পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে ইসরাইল। পালিয়ে গেলেও গ্রুপটির রক্ষা নেই। সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের সদস্যদের পশ্চিম তীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা সব রকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

আইপিএস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে যে দৃশ্য দেখা গেছে তাতে আইকনিক ১৯৯৪ সালের জেল পালানো ছবি ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে দেখা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটি সংকীর্ণ টানেল বা সুড়ঙ্গ পরীক্ষা করে দেখছেন। একটি সিঙ্ক বা বেসিনের নিচে এই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। তা বিস্তৃত হয়েছে একদম নিচতলায় মাটি পর্যন্ত। ইসরাইলে যখন ‘হাই হলিডে’র ছুটি কাটাতে প্রস্তুত, তখন এই জেল পালানোর ঘটনা ঘটলো। সোমবার সূর্য্য ডোবার পর এই উৎসব শুরু হওয়ার কথা। এমন সময় এ ঘটনাকে ‘একটি গুরুত্বর’ বিষয় বলে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। বলেছেন, তিনি উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে নিয়মিত খবর রাখছেন।

গিলবোয়া কারাগারের ৪০০ বন্দির সবাইকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইপিএস বলেছে, ওই জেলখানায় আরও টানেল বা সুড়ঙ্গ থাকতে পারে, এই আশঙ্কায় বন্দিদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস। তারা জেল থেকে পালানোকে একটি ‘সাহসী এবং বীরোচিত কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তব পরাজয় ঘটলো। গাজায় আরেকটি অধিকার বিষয়ক গ্রুপ ইসলামিক জিহাদও এই জেল পালানোর প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, দখলদার বাহিনীর জন্য এটি হলো একটি শক্তিশালী আঘাত।

উল্লেখ্য, আল আকসা মার্টিরস ব্রিগেডসের সাবেক প্রধান জাকারিয়া জুবেইদি। ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলিদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ। রামাল্লার কাছে পশ্চিম তীর থেকে ২০১৯ সালে সন্ত্রাসের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০২ সালে জেনিনের গভর্নর কাদ্দুরা মুসাকে গুলি করায় অংশগ্রহণের অভিযোগে ফিলিস্তিন সরকারেরও চার্জের মুখোমুখি জুবেইদি। ওই গুলির পরে হার্ট এটাকে মারা যান মুসা। তখন ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক ডজন মানুষকে গ্রেপ্তার করে। তার মধ্যে এই জুবেইদিও ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি অস্ত্র সমর্পণে রাজি হন। তারপার জেনিনের ফ্রিডম থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ২০১১ সালে ফ্রিডম থিয়েটার্সের সুপরিচিত ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি পরিচালক জুলিয়ানো মের-খামিসকে জেনিন শরণার্থী শিবিরে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা এখনও রহস্যাবৃত।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ফরাসি নাগরিকদের পাকিস্তান ছাড়ার পরামর্শ

আনসারুল হক

আল-আকসায় প্রবেশে বিধিনিষেধ দেবে ইসরায়েল

নূর নিউজ

কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি হাফেজকে বিরল সম্মান জানালেন এরদোয়ান

নূর নিউজ