সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। আর ওমরাহ হলো গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। গুরুত্বপূর্ণ এই দু্ই ইবাদত পালনের জন্য প্রথমেই ইহরাম বাঁধতে হয় এবং ইহরাম বাঁধা হজ ও ওমরার জন্য প্রথম রুকন।
ইহরাম কি?
اَلْاِحْرَامُ (ইহরাম) শব্দটি حَرَامٌ (হারাম) শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো কোনো জিনিসকে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেয়া। ওমরা পালনকারী ব্যক্তি ইহরামের মাধ্যমে নিজের ওপর স্ত্রী সহবাস, মাথার চুল, হাতের নখ, গোঁফ, বগল ও নাভির নিচের ক্ষৌর কর্যাদি, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা পোশাক পরিধান এবং শিকার করাসহ কিছু বিষয়কে হারাম করে নেয়। এজন্য একে ইহরাম বলা হয়।
আর হজ ও ওমরা পালনের নিয়তে যারা মক্কার উদ্দেশে গমন করেন, তাদের মিকাত (নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিতে হয়। ইহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা তাদের জন্য জায়েজ নয়।
ইহরাম কেন বাঁধতে হয়
নামাজের জন্য যেভাবে তাকবিরে তাহরিমা বাঁধা হয় ঠিক তেমনি হজের জন্য ইহরাম বাধা হয়। আর নামাজে যেমন তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের অন্য হালাল ও বৈধ কাজগুলো নামাজি ব্যক্তির জন্য হারাম হয়ে যায়। ইহরামের মাধ্যমেও হজ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তির জন্যও স্বাভাবিক অবস্থার অনেক হালাল কাজও হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই হজ ও ওমরার জন্য ইহরামে ফরজ করা হয়েছে।
পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় আর নারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় শালীন পোশাক পরিধান করাই হলো ইহরাম।
ইহরাম বাঁধার আগে যা করবেন
ইহরাম বাঁধার আগে গোঁফ, বগল ও নাভীর নিচের ক্ষৌর কার্যাদি সম্পন্ন করা, নখ কাটা, গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাওয়া আবশ্যক। এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদেরও এ সময় গোসল করা মুস্তাহাব। সুগন্ধি ব্যবহার করাও মুস্তাহাব। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৮৯; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃষ্ঠা: ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২২২; মানাসিক মোল্লা আলী কারি, পৃষ্ঠা: ৯৮)
হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইহরাম বাঁধার আগে তাঁকে সুগন্ধি মাখিয়ে দিতাম। (বুখারি, মসুলিম, হিদায়া) তবে ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ।
ইহরাম বাঁধার আগে ভালোভাবে গোসল করে নিতে হবে, গোসল সম্ভব না হলে ওজু করতে হবে।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম
মীকাতের নির্ধারিত স্থানে অথবা মীকাতের নির্ধারিত স্থানের আগেই ইহরামের কাপড় পরতে হয়। এসময় পুরুষেরা দু’টি নতুন বা পরিষ্কার সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার উপরের অংশ খোলা থাকে এমন জুতা বা স্যাণ্ডেল পরবে। নারীরা স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা পরার অবকাশ রয়েছে।
মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। অতঃপর যে হজ আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। নামাজের প্রথম রাকাআতে সুরা ফাতিহা পর সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব। (নামাজের সময় মাথায় টুপি থাকবে, নামাজ শেষে নিয়তের আগেই টুপি খুলে ফেলা)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হজের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে রওনা হয়ে জুলহুলাইফাতে পৌঁছলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। অতঃপর জুলহুলাইফার নিকট যখন উটনী তাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন…। (মুসলিম: ১/৩৭৬)
ইহরামের নিয়ত করা
ইহরামের কাপড় পরিধানের পর ইহরামের নিয়ত করতে হবে। যদি ওমরা জন্য ইহরাম হয় তাহলে বলবে- ‘লাব্বাইক ওমরাতান’ (لَبَّيْك عُمْرَةً) আর যদি ইহরাম হজের জন্য হয় তাহলে বলবে- ‘লাব্বাইক হাজ্জান’ (لَبَّيْك حَجً)
অতঃপর হজ বা ওমরা সহজে সম্পাদনের জন্য ইমাম কুদুরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ দোয়াটি পড়তে বলেন-
(اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ (العُمْرَةَ – الْحَجَّ) فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা/হাজ্জা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরার/হজের ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’
তালবিয়া পাঠ
ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ বা ওমরাহর নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর মাধ্যমে ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এই বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। ’ (মুসলিম, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৭৬)
ইহরাম বাধার পর হজ বা ওমরা পালনেচ্ছুগণ বেশি বেশি তালবিয়া, দরূদ ও নিজেদের ইচ্ছা মতো দোয়া পাঠ করবে। ইহরাম বাধার পর এ দোয়া পাঠ করাও সুন্নাত-
(اَللَّهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَ الْجَنَّةَ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَ النَّارِ)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউ’জুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান্নারি’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসুন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’