করোনায় পিছিয়ে গেল মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া

দীর্ঘ তিন বছর পর নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। চাহিদা এবং এর বিপরীতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি মাসেই সেখানে কর্মী পাঠানো শুরুর কথা ছিলো। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা আর এগোচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, করোনার কারণে মালয়েশিয়া সরকারই নানা বাধ্যবাধকতা দিয়ে রেখেছে। যে কারণে চাইলেও জানুয়ারি থেকে কর্মী পাঠাতে পারছি না।

দুর্নীতি আর সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। গত তিন বছরে দেশটিতে কর্মী পাঠানো যায়নি বরং মহামারি করোনার কারণে কাজ হারিয়ে বহু শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। অনেকে অবৈধ হয়ে জেল জরিমানার মুখে পড়েছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটিতে ফের কর্মী পাঠাতে দেনদরবার শুরু করে সরকার। প্রায় এক বছর আলোচনার পর গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় মালয়েশিয়া সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ ডিসেম্বর দেশটির রাজধানী কুয়ালামপুরে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান নতুন করে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সকল ব্যয় বহন করবেন নিয়োগকর্তা। এই খরচের মধ্যে রয়েছে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনা, আবাসন, কাজে যোগদান এবং ওই কর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনসিওরেন্স, কোভিড টেস্ট এবং কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচ বহন করার কথা মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তার। কর্মীর বীমা, চিকিৎসার বিষয়টি নিয়োগকর্তা নিশ্চিত করবেন। দুই দেশের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষে দুই পক্ষ চাইলে মেয়াদ বাড়াতে পারবে। এর বাইরেও চুক্তিতে কর্মীর বেতন উল্লেখ, মেয়াদ কতদিন, মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বেতন পরিশোধ, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো কর্মী অবৈধ কাজে লিপ্ত হলে নিজ খরচেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর বাংলাদেশ অংশের খরচ কর্মীকেই বহন করতে হবে। আর তা নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি।

যদিও সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কর্মী নিয়োগের এই প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেছেন বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি- বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে যতবার এমন চুক্তি হয়েছে ততবারই এ বিষয় উল্লেখ ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, এরমধ্যে অনেক অদৃশ্য ব্যয় থাকবে যা কেউ বহন করতে চাইবে না। শেষমেশ শ্রমিকদেরই বহন করতে হবে।

তার আশঙ্কা দূর করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমার মূল লক্ষ্য মার্কেট খোলা। দ্বিতীয় লক্ষ্য অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনা। সমঝোতা চুক্তিতে কর্মীর ধরন ম্যানশন করা আছে। তাতে কর্মীর ওপরে খুব চাপ পড়ার কথা না। আমরা ওয়ার্কআউট করছি কত খরচ আসবে কী আসবে না। যাই আসুক না কেন তারমধ্যেই যেন কর্মীরা যেতে পারেন। আমাদের ভেতর থেকে যত মেকানিজম সেট করার আছে আমরা তাই করব।

যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিন বছর আগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া, আবার সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই লোক পাঠানো হচ্ছে। জানা গেছে, এবার বাংলাদেশের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি আর ২৫০ সাব এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবেন। প্রশ্ন উঠেছে আবারও সেই সিন্ডিকেট যেহেতু থাকছে সেক্ষেত্রে প্রতারণার আশঙ্কা রয়েছে কি না?

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অংশে যত রিক্রুটিং এজেন্সি আছে তারা সকলে সরকারের নিবন্ধিত। যে কারণে সরকারের একটা রেসপন্সিবিলিটি চলে আসে। একটা কন্ট্রোল চলে আসে। আমরা অন্যায়কে ঠেকানোর জন্য যত কন্ট্রোল হাতে আছে তা ব্যবহার করব। ১ লাখ ৬০ হাজার যে খরচের কথা বলা হচ্ছে তা গণমাধ্যমের কথা। অন্যায় যদি অতীতে হয়ে থাকে সেটার ধারাবাহিকতা আমি রাখতে চাইনা। আমি অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজারের অনেক নিচে দেখছি।

মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। এবার সেখানে প্ল্যান্টেশনসহ বেশ কয়েকটি খাতে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদা রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশটিতে গত ১০ বছরে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮১২ জন কর্মী পাঠানো গেছে।

সুত্র: সারাবাংলা.নেট

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিল দক্ষিণ কোরিয়া

আনসারুল হক

সৌদিতে চার প্রবাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

নূর নিউজ

কুয়েতে ডেলিভারি কোম্পানির জন্য নতুন নির্দেশনা

নূর নিউজ