আমিনুল হক কাজল, কাতার প্রতিনিধি
কাতারের রাজধানী দোহার ইবনে হাজাম জামে মসজিদে বৃহস্পতিবার বাদ এশা ‘ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব’ – শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আল-নূর কালচারাল সেন্টার কাতার আয়োজিত এ ওয়াজ মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সেন্টারের গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ও বাংলাদেশ স্কুল ও কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.কে.মে. আমিনুল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইমাম ও খতিব এবং আল-নূর কালচারাল সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা ইউসুফ নূর। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আওকাফের ইমাম হাফেজ ওবায়দুল্লাহ আল রাফি। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক প্রকৌশলী শোয়াইব কাশেম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক পরিচালক প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম, জনসংযোগ বিষয়ক পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুল হক, শিক্ষা বিভাগের সহযোগী পরিচালক প্রভাষক আবু শামা, অর্থ সম্পাদক সালেহ মুহাম্মদ নূরুন্নবী, ক্বারী ইব্রাহিম প্রধান সহ আল-নূরের নির্বাহী সদস্য ও দোহা জাদিদ মসজিদের বাংলাদেশী মুসল্লিরা।
প্রধান আলোচক মাওলানা ইউসুফ নূর বলেন, ভাষা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ দান। মাতৃভাষা চর্চার প্রতি ইসলাম অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা। ভাষা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,‘‘ দয়াময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা’ (সুরা আর রহমান, আয়াত-১-৪)
মানুষের কাছে সবচেয়ে বোধগম্য ভাষা তার মাতৃভাষা। তাই মহান আল্লাহ মাতৃভাষায় কুরআন নাজিল করেছেন যেন তারা দ্বীন সহীহ-শুদ্ধভাবে বুঝতে পারে।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২, পারা: ১২)।
ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২, ২১; পারা: ২১)।
মাওলানা ইউসুফ নূর আরও বলেন মাতৃভাষায় কথা বলা আমাদের রাসুল (সা.) এর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আরবের সবচাইতে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন মহানবী (সাঃ)। এর চেয়ে শুদ্ধ আরবিভাষী আগেও কেউ ছিল না, ভবিষ্যতেও কেউ থাকবে না। তাই মহানবী (সাঃ) সুন্নত হিসেবে প্রত্যেক বাংলাভাষী মুসলমান নিজ মাতৃভাষায় শুদ্ধভাবে লেখা, পড়া ও বলা মহানবীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশের বহিঃপ্রকাশ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, পাকিস্তানিরা অন্যায়ভাবে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের এ অন্যায়কে সে সময়ের মাতৃভাষাপ্রেমি ছাত্র-জনতা মেনে নিতে পারে নি। মিছিলে মিছিলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে। তাদের কণ্ঠরোধ করতেই নির্বিচারে গুলি চালায় তখন পাকিস্তানি পুলিশ। আত্মাহুতি দেয় রফিক,জব্বার, সালাম, বরকত, সফিউর সহ অনেক ছাত্র-জনতা। তাদের রক্তদান বৃথা যায় নি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর সাংবিধানিকভাবে উর্দুর পাশাপাশি বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে।
তাই কোনরূপ হীনমণ্যতায় না ভুগে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে।