গরমে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও খোলা কোচিং সেন্টার ও মাদরাসা

প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে সরকার সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও ময়মনসিংহে চলছে কোচিং সেন্টার ও আবাসিক-অনাবাসিক কওমি মাদরাসা। এতে শিক্ষার্থীরা অস্বস্তি প্রকাশ করলেও শিক্ষক এবং অভিভাবকের চাপে কোচিং সেন্টার ও মাদরাসায় আসতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এসব কোচিং সেন্টার ও মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার, মদিনা নগর ও সবজিপাড়া এলাকায় কয়েকটি মাদরাসা ও রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে নগরীর বাউন্ডারী রোড, নাহা রোড, কলেজ রোড, জিলা স্কুল রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কোচিং সেন্টার চালু থাকতে দেখা যায়।

এছাড়াও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে করানো হচ্ছে ক্লাস। শিক্ষার্থীরা বলছে, গরমের মধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখলেই তাদের জন্য ভালো হয়।

নগরীর ৩১ নম্বর মদিনা নগরের মারকাজুল কোরআন মাদরাসার কওমি মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা, হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন অভিভাবকরা। আবার কোনো কোনো অভিভাবক বারান্দায় বসে শিশুদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

মাদরাসায় পড়তে আসা শিশু সারা মনির মা তাসলিমা আক্তার বলেন, শুনেছি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়েছে। কিন্তু মাদরাসাতো বন্ধ দেয়নি। তাই বাচ্চাকে নিয়ে মাদরাসায় এসেছি।

আরেক শিশু শিক্ষার্থী আরিয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, গরমের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়েছে। তবে সরকার মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে আমার জানা নেই। এই গরমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যেমন কষ্ট পাবে, ঠিক তেমনি মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও কষ্ট পাচ্ছে। যদি সরকার স্কুল কলেজের পাশাপাশি কওমি মাদরাসা ও মহিলা মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করে তাহলে বাচ্চাদের জন্য ভালো হবে।

মারকাজুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা রশিদ আহমেদ বলেন, আমরা সরকারি নিয়মকানুনের বাহিরে না। আমরা সরকারি নিয়মকানুনকে শ্রদ্ধা জানাই। তবে কওমি মাদরাসাগুলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর অধীনে। বেফাক থেকে এখনো আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাছাড়া এখন আমাদের কওমি মাদরাসায় ভর্তির সময় চলছে। এমন সময় যদি মাদরাসা বন্ধ করে দিই, তাহলে শিক্ষার্থী পাবো না। তারপরও যদি দেশের সব মাদরাসা বন্ধ রাখে, তাহলে আমরাও বন্ধ রাখবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কেউ এড়াতে পারবে না। রাস্তায় চলার পথে দুর্ঘটনা ঘটে, তাই বলে কি মানুষ গাড়িতে চড়া বন্ধ করে দিয়েছে। যে গরম আছে, সেই গরম হয়তো আর এক-দুই দিন থাকতে পারে। পরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার হাফিজুল কোরআন আদর্শ মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ কারী সানাউল্লাহ বলেন, সরকারি নির্দেশনাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তবে আমাদের মাদরাসার বোর্ড আছে। কওমি শিক্ষা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর অধীনে। আমরা বেফাকের নির্দেশনে মেনে চলি। বেফাক থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে আমরা চিন্তা ভাবনা করবো।

তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার সিলেবাস অনুযায়ী রমজান মাসে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে শাওয়াল মাসের ৭-৮ তারিখ ভর্তি কর্যক্রম পুরদমে শুরু হয়। এখন ভর্তির সময়। ক্লাস শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। যেহেতু গরম অনেক বেশি, বিদ্যুৎ থাকে না, তাই শিক্ষার্থী এলে ভর্তি করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। আমরা বলে দিচ্ছি, পরবর্তী সময়ে যখন ডাকবো তখন যেন চলে আসে।

এদিকে নগরীর সজীব স্যারের গণিত প্রাইভেট প্রোগ্রামের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনুপম রায় জানায়, কোচি সেন্টারে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে কিছুটা কষ্ট হয়। এখন অনেক গরম, বাসা থেকে বের হতেই মন চায় না। স্যাররা যদি কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতো, তাহলে ভালো হতো।

নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আফিয়া জান্নাত জানায়, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয় না, এখন কোচিংয়ে না এলে পড়া কীভাবে হবে। স্কুল খুললেইতো আবার আমাদের পরীক্ষা। যদিও প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কোচিংয়ে আসতে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তারপরও আশা করছি আল্লাহর রহমতে কিছু হবে না।

অভিভাবক রাকিবুল ইসলাম বলেন, বছরের ছয়মাস বিভিন্ন কারণে স্কুল বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট এবং কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তবে এখন সরকারের স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যৌক্তিক। কোচিং বন্ধে যদি কোনো নির্দেশনা আসে, তাহলে হয়তো শিক্ষকরা বন্ধ রাখবেন।

ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সজীব আহম্মেদ বলেন, হঠাৎ করে স্কুল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানা নেই। সব শিক্ষকরাই কোচিং চালাচ্ছেন। তারা যদি বন্ধ করে দেন তাহলে আমিও বন্ধ করে দেবো। এতে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে। গরমের জন্য ক্লাসে অতিরিক্ত ফ্যান লাগানো হয়েছে।

ময়মনসিংহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা। তাই তাদের স্পেশাল ক্লাসের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। যদি সমস্যা মনে করি তাহলে তাও বন্ধ করে দেবো। এ বিষয়ে সকল শিক্ষকরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে নিয়ে এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে শিক্ষকদের উচিত সকল ধরনের কোচিং প্রোগ্রাম বন্ধ রাখা। অভিযোগ পেয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোচিং পরিচালনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা এবিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, মাদরাসা বা কোচিং সেন্টার সবই বন্ধ থাকবে। এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

সূত্র : জাগো নিউজ

এ জাতীয় আরো সংবাদ

মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

নূর নিউজ

ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ

নূর নিউজ

ফেসবুক প্রতিনিধির সাথে কী কথা হলো ইসির ?

নূর নিউজ