তিন প্রজন্মের শিক্ষক শতবর্ষী আলেমের চিরবিদায়

মুফতি মুহাম্মদ ওসমান সাদেক:

মহান আল্লাহর বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে বহু মানুষের আগমন ঘটেছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাদের ক্ষণস্থায়ী এই জগৎ ছেড়ে অনাদি অনন্তকালে পাড়ি জমাতে হয়েছে। বস্তুত শুধু মানুষ নয়, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ উপভোগ করবে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

উত্তর চট্টগ্রামের মাওলানা কারি ইসমাঈল (রহ.) ছিলেন এমনই একজন আল্লাহভীরু প্রবীণ আলেম। ৭০ বছরের বেশি সময় তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। তাজবিদ ও কেরাত বিষয়ে তিনি একজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। কেরাত শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন পাঠ শেখাতে জীবনের বৃহৎ সময় কাটান তিনি।

মাওলানা কারি ইসমাঈল (রহ.) ১৯১৯ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার ঐতিহ্যবাহী বাবুনগর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ গ্রাম বাংলাদেশে অনেক প্রবীণ আলেম বিধৌত ঐতিহ্যবাহী একটি এলাকা। পারিবারিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর বাড়ির পাশে বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগর মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি এ মাদরাসায় দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন দুই ছেলে ও এক মেয়ের গর্বিত পিতা।

মাওলানা কারি ইসমাঈল দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় পবিত্র কোরআন শেখান। এ সময় তাঁর কাছে হাজার হাজার ছাত্র পড়াশোনা করেন। ফলে একই পরিবারের কয়েক প্রজন্মের শিক্ষক ছিলেন তিনি। প্রায় সময় তিনি গর্বভরে বলতেন, ‘তোমার দাদাকেও পড়িয়েছি, তোমার বাবাকেও পড়িয়েছি। আজ তুমিও আমার কাছে কোরআন শিখতে এসেছ।’

পবিত্র কোরআনের হাফেজ ও শিক্ষকদের জীবন অত্যন্ত সম্মানের। জীবনযাত্রায় তাঁরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হোন। অশীতিপর বার্ধক্যে উপনীত হয়েও তাঁরা অন্যের জন্য কষ্টের বোঝা হন না। মাওলানা কারি ইসমাঈল ছিলেন এর উজ্জ্বলতম নমুনা। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের পরতে পরতে আমরা এর অনুপম নমুনা দেখতে পাই।

বিশিষ্ট সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা কোরআন পাঠ করবেন, তাঁরা বার্ধক্যের কষ্ট পাবেন না। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাঁকে (মানুষ) অত্যন্ত হীন-নিচু করি। তবে যারা ঈমান আনে।’ এখানে ঈমান আনে এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, যারা কোরআন পাঠ করে।’ (মুসতাদরাক আল হাকিম, হাদিস : ১৪৩৫, পৃষ্ঠা : ৫২৮/২)

অবাক করা ব্যাপার হলো, অশীতিপর বার্ধক্যের সময়েও তিনি থলে নিয়ে একাই বাজার-সদাই করতেন। সঙ্গে কেউ থাকত না। এমনকি মাঝেমধ্যে আমাদের সাক্ষাৎ হলে খোঁজখবর নিতেন। বুকে জড়িয়ে আদর-আপ্যায়ন করতেন ও দোয়া দিতেন।

গতকাল শনিবার (২২ মে) বিকেল ৫টায় এ মহান মনীষী নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন রাত সাড়ে ১০টায় বাবুনগর মাদরাসার সুবিশাল চত্বরে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জামেয়ার পরিচালক মরহুমের সহপাঠী আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ জানাজার নামাজে ইমামতি করেন।

রাত হলেও মাদরাসা প্রাঙ্গণে প্রয়াত আলেমের ছাত্র, ভক্ত ও শিষ্যসহ হাজার হাজার মুসল্লি মরহুমের জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। পুরো মাদরাসা প্রাঙ্গণ উপস্থিত মুসল্লিতে ভরে ওঠে। মরহুমকে জামেয়া বাবুনগরের জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মাকবারায়ে হারুনীতে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সেবক এ মহান আলেমকে ক্ষমা করুন। তাঁকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রশাসনে তিন লাখ ৮০ হাজার পদ শূন্য

আনসারুল হক

টানা ৩০ দিন করোনায় মৃত্যুহীন দেশ

নূর নিউজ

বিধি-নিষেধ বাড়তে পারে আরও সাত দিন, চূড়ান্ত কাল

আনসারুল হক