আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নির্দিষ্ট আয়ুকাল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমে দাদা, এরপর বাবা, এরপর নাতি-নাতনির আগমন ঘটে থাকে। তবে পৃথিবী থেকে বিদায়ের কোনো স্বাভাবিক নিয়ম নেই। পরিবারের সব থেকে বড় সদস্যের আগেও অনেক সময় সবার ছোট শিশুটি চলে যায় পরকালে। প্রতিনিয়তই আমরা এমন অসংখ্য নির্মম বাস্তবতার সাক্ষী হচ্ছি। মৃত্যুই মানুষের জীবনে চরম বাস্তবতা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘জীবমাত্ৰই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোর মাধ্যমে বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা ফিরে আসব‘। (সূরা আম্বিয়া, (২১), আয়াত, ৩৫)
অপর এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে বসবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান কর।’(সূরা নিসা, আয়াত, ৭৮)
প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, সবসময় পরকালের চিন্তা ধারণ ও অন্তরে লালন করা।
মৃত্যু পরবর্তী জীবনের চিন্তা-ভাবনা জাগ্রত রাখার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো- কবর জিয়ারত। কবর জিয়ারত হৃদয়কে নরম ও কোমল করে, মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গুনাহ বর্জনের প্রেরণা ও ভালো কাজের আগ্রহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর জিয়ারত কর। কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয়, পরকালের স্মরণ ও ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজা, হাদিস, ১৭৬৯)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের উদ্যানগুলোর একটি অথবা জাহান্নামের গর্তগুলো একটি’। (তিরমিজি, হাদিস, ২৪৬০)
পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন শেষে পরকালে পাড়ি দিতেই হবে, সেখানে অন্ততকাল বসবাস করতে হবে, যে জীবনের শেষ নেই কখনো। তাই একজন মুমিনের পরকালের সুখ- শান্তি, নাজ-নিয়ামতের কথা ভাবা উচিত।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে,‘যে ব্যক্তি নিজের সব চিন্তাকে এক চিন্তায় অর্থাৎ, পরকালের চিন্তায় নিবদ্ধ রাখে, আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়ার সব উদ্দেশ্য পূরণে যথেষ্ট হয়ে যান, আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার বিভিন্ন চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে থাকে, তার জন্য আল্লাহর কোন পরোয়া নাই। (দুনিয়া যে কোন স্থানে যেকোনো অবস্থায়) ধ্বংস হোক না কেন, আল্লাহর কোন পরোয়া নেই’। (ইবনে মাজা, হাদিস, ২৫৭)
অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সব স্বাদ বিনাশকারী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি আলোচনা কর’।(তিরমিজি, হাদিস, ২৩০৭)
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মাঝেমধ্যে কবর জিয়ারত করতেন। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতগুলো আমার কাছে অবস্থান করতেন, এর মাঝে কখনো কখনো জান্নাতুল বাকী নামক স্থানে কবর জিয়ারতে বের হতেন’।(মেশকাত, হাদিস, ১৭৬৬)