বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ (মঙ্গলবার) কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজামণ্ডপ, মন্দির, ঘরবাড়ীতে হামলা, ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ এবং হাজীগঞ্জে ও চৌমুহনীতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এমন পরমর্শ দেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কি একটি কথার উত্তর দিবেন? আজকে সাত দিন হয়ে গেছে আপনি কুমিল্লাসহ এই জায়গাগুলো পরিদর্শনে যাননি কেন? প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, পীরগঞ্জে ওখানে তো আপনার শ্বশুর বাড়ি। আপনার ছেলে তো সম্ভবত ওখানকার ভোটার। আপনার তো নৈতিক দায়িত্ব আছে তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার। কিন্তু সেখানেও আপনি ছুটে যাননি। প্রথম দিন যদি আপনারা কুমিল্লায় যেতেন তাহলে আজকে আর এসব ঘটনা ঘটতো না।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের জন্য অনেক খেটেছেন। আপনার এখন বিশ্রাম দরকার। দয়া করে এখন শেখ রেহেনার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি এতো পরিশ্রম করেছেন যার ফলাফল তার শরীরে এসেছে। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা যদি বিগত ঘটনাগুলো দেখি নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সবচেয়ে বড় যে ঘটনা গাইবান্ধায় তার প্রশাসন মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেয় নাই। আহমাদিয়াদের ঘরের ভিতরে মিটিং করতে দেয়নাই। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নাই। তার ওয়াজ একটাই-কঠিন শাস্তি দিব, কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। এসব বলে তিনি পুলিশের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ যাকে পারো তাকে ধরো।’
তিনি বলেন, ‘জাফরুল্লাহকে ধইরো না, জেলখানায় মারা যেতে পারে। সেজন্যই হয়তো ধরে না। তার বিরুদ্ধে মাছ চুরির মামলা দাও। কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকুক ঘন্টার পর ঘন্টা। ওটা কিন্তু জেলে যাবার চাইতেও খারাপ। আমি হাঁটতে পারি না, প্রতিদিন কোর্টের দরজায় চার ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমাকে তারা জেলে যাওয়ার চাইতে বেশি কষ্ট দিয়েছে। এর একটি মাত্র কারণ আমি সত্য কথা বলেছি, আমি ন্যায়ের কথা বলেছি।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, পূজামণ্ডপে হামলা ঘটে যাওয়ার ১০ দিন আগে থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এবার পুজামণ্ডপে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। প্রতিটা মন্দির নিরবিচ্ছিন্নভাবে রক্ষা করবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কিছু গোয়েন্দা বাহিনী আছে। যে বাহিনীর আসল হর্তাকর্তা ‘র’। মোদী বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার আলেমদের মুক্তির দাবিতে আমাদের আলেমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখা করেছেন। সেটা ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী পছন্দ করেন নাই। তাই তাকে একটু অপমান করলো। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী সংখ্যালঘুদের দিয়ে কামালকে একটু শিক্ষা দিল।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমাদের দেশের নোয়াখালীর সূর্য সন্তান ওবায়দুল কাদের আঙ্গুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কলা গীত গেয়ে থাকেন। তার গীতের বিষয়বস্তু একই । এটা বিএনপি করেছে, জামায়াত করেছে আর তারা পুতপবিত্র। তারা কোনো কিছু করেন নাই। তারা খালি আঙ্গুল নাড়িছে ও বই দেখে দেখে বক্তৃতা দিয়েছে। কিন্তু একজন সাচ্চা মুসলমান হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের একবারও নোয়াখালী ঘুরে আসার কথা মনে হয় নাই। তার মনে হয়নি হিন্দু-মুসলমান সব তো আল্লাহর সৃষ্টি। তাদের অবস্থাটা দেখে আসি। তিনি যাননি। গেলে দেখতেন তাদের আমলে কত বড় ইসলাম বহির্ভূত কাজ হয়েছে। ইসলামে কোথাও বলা হয়নি অন্য ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করো।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় প্রথম দিন যে ঘটনা ঘটল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নৈতিক দায়িত্ব ছিল ওবায়দুল কাদের সাহেবের সেখানে যাওয়া। তারা যান নাই। না যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে মনে হয়েছে এটাতে সরকারের মদদ আছে। সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলাগুলোকে সংগঠিত ও পরিকল্পিত। এর ফলে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে এই হামলাগুলো বন্ধ করতে হবে। এরপর আর একটা হামলা মানে হচ্ছে এই সরকার পতনের আন্দোলন। তিনি বলেন, প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনের যেই ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল তা তারা নেননি। একটা দুইটা ঘটনাকে আকষ্মিক বলে চালিয়ে দেওয়া গেলেও বার বার সেগুলোকে জায়েজ করার সুযোগ নেই। পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই ঘটনাগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে, ঘটতে দেওয়া হচ্ছে