আনন্দ-উৎসব, নতুন কিছু পালন বা বরণে মানুষের মনে এক ধরনের উৎসব আমেজ সব সময় থাকে। তবে বর্তমানে উৎসব বা নতুনকে বরণের প্রবণতা উন্মাদনায় পরিণত হয়েছে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে শহর-নগরে জমে ওঠে উদ্দাম নাচ-গান ও আতাশবাজির আসর। এসব আয়োজন একদিকে যেমন ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থী তেমনি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
বছরের শুরুর দিনে একজন চিন্তাশীল মানুষের জন্য মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনা জরুরি। অথচ এই সময় আত্মসমালোচনার পরিবর্তে আত্মবিস্মৃতির দৃষ্টান্তই প্রকটভাবে দেখা যায়। উৎসব বা যেকোনো প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একজন মুমিনের জন্য উচিত আল্লাহর রাসূলের কর্মপন্থা অনুসরণ করা।
রাসূল সা.-এর উদযাপন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন তিনি দেখলেন সেখানে আগে থেকে বসবাস করা মানুষেরা বছরে দুইটি বিশেষ উৎসব পালন করে, আর (সে উৎসবে তাই হতো, যা সাধারণত আমাদের দেশের থার্টিফার্স্ট নাইট, ও নববর্ষ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবগুলোতে হয়ে থাকে, অর্থাৎ, নাচ, নৃত্য, গান-বাজনা, ঢোল-তবলা, আলোকসজ্জা, আতশবাজি, পটকাবাজি, ইত্যাদি)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উৎসব পালনের এই রীতি অপছন্দ করলেন এবং তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এই দুই দিনে তোমরা কিসের উৎসব পালন করো?
উত্তরে তারা বললো- আমরা জাহেলিয়াতের যুগে এই দুটি দিনে খেলাধুলা, আনন্দ ফুর্তি করতাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দুইটি দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন, এর একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হলো, ঈদুল আজহা।’(আবু দাউদ, হাদিস, ১১৩৪)
হাদিসের এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, উৎসব পালনের জন্য বছরের প্রথম দিন বা যেকোনো মুর্হুতে নাচ-গান, ঢোল-তবলা বাজানো মুসলিমের জন্য শোভনীয় নয়, এবং এটা মুসলিম সংস্কৃতিরও অংশ নয়। এসবের মাধ্যমে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপে অংশ গ্রহণের গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে মানুষ।
বিজাতির সাদৃশ্য গ্রহণের ক্ষতি
আতশবাজি,পটকাবাজি, ট্যাটু আঁকা, আঁটসাঁট ও অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা- মূল কথা শরীয়তের সঙ্গে যায় না এমন যেকোনো বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এক হাদিসে হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জাতির (সম্পদ্রয়ের) অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।’(আবু দাউদ, হাদিস, ৪০৩১)
অপর একটি হাদিসে আরও কঠিন হুঁশিয়ার উচ্চারণ করা হয়েছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, কিয়ামত দিবসে সে তার সাথেই অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস, ২৩৮৫)
আতশবাজি, পটকাবাজির মাধ্যমে আতঙ্কিত করার ক্ষতি
বর্তমানে বর্ষবরণ বা থার্টি-ফার্স্ট নাইট পালনের নামে আতশবাজি, পটকাবাজি ঢোল,তবলা ইত্যাদি যা-কিছু করা হয়, এতে ছোট-বড়, বয়োবৃদ্ধ অনেক মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইসলামে অন্যের ক্ষতি ও অন্যকে আতঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত করা নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত কাজ।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় অপর কোন মুসলমানকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা।’(মুসনাদে আহমদ, হাদিস, ২৩০৬৪)
অপর এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সে-ই, যে আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে।’ (বুখারি, হাদিস, ১০)
অপচয়ের ক্ষতি
এছাড়াও বর্ষবরণ বা থার্টি-ফার্স্ট নাইট পালনের সময় আতশবাজি, পটকাবাজি ঢোল,তবলা বাজানোর জন্য যে আয়োজন করা হয়, এতে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক অপচয়-অপব্যয় হয়ে থাকে। কোরআন হাদিসে যেসব বিষয়ে খুব শক্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এর অন্যতম হলো অপচয়, অপব্যয়। বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে এ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপচয়ের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হয়েছে, ‘অর্থ ব্যয়ে সীমা লঙ্ঘন করো না। আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ ( সূরা আল আনআম, আয়াত, ১৪১)
তাই বর্ষবরণ বা থার্টি-ফার্স্ট নাইট পালনের নামে ইসলাম সমর্থন করে না এমন সব কর্মকাণ্ড পরিহার করা উচিত।