বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ 

আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও হেফাজত মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, সিলেটের বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। তাদের দুর্দিনে আর্থিক সহায়তা, খাবার-দাবার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসা ঈমানের দাবি। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো অসহায়-দুর্গত মানুষদের সাহায্য করাও ইবাদত। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের একটি দেহের মতো বানিয়েছেন। দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে পুরো দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার পুরো দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম : হাদিস ৬৪৮০)।

তারা বলেন, এ জন্য যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি অসহায়-দুর্গত মানুষদের সাহায্য করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৫৪)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ : হাদিস ৪৯৪১)।

নেতৃদ্বয় আরো বলেন, তবে এ ব্যয়, দান ও দয়া হতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, অভাবী ও বিপন্ন মানুষের কাছ থেকে কোনোরকম প্রতিদানের আশা ছাড়া, কেবল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। যেমন আল্লাহতায়ালা সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাবার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহর : আয়াত ৮-৯)।

তারা আরো বলেন, মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে তার জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আর তা তিনি বহুগুণ ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর সালাত কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু আগে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসাবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তররূপে। (সূরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)। এ আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হলো তার পথে খরচ করা। গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা। পরকালে এর বিনিময় দেওয়া হবে সওয়াবরূপে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কিসে তোমাদের দোজখে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে আমরা মুমিনদের দলভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না। (সূরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪২-৪৪)।

তারা বলেন, মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সব সময় অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। মদিনার আনসার সাহাবিরা মুহাজির সাহাবিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন আল্লাহর রাসূলের এ আদর্শ লালন ও পালন করেছেন। পরবর্তী সুলতানি আমলের রাজা-বাদশাহরাও অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন সরাইখানা, আশ্রয়কেন্দ্র, দারুজ জিয়াফাহ, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ করেছিলেন।

অতএব, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শিক্ষা ধারণ করে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে যার যার সামর্থানুযায়ী এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য। বন্যায় দুর্গত মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা দেশবাসীর নিকট উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সাথে দু’আ করছি, আল্লাহ তাদের সহায় হোন, রহম করুন, আমীন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

মিয়ানমারে ফিরতে চাওয়ায় খুন করা হয় মহিবুল্লাহকে

নূর নিউজ

মুসলিম-অমুসলিম কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি জুলুম সহ্য করা হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানি

নূর নিউজ

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সহধর্মিনীর ইন্তেকালে ইসলামী ঐক্যজোটের গভীর শোক

আনসারুল হক