প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পেরেছি। আশা করছি জুন মাসের মধ্যেই (চলতি মাস) আমরা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু করব। বৃহস্পতিবার (২ জুন) নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বছরেই দুই লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। এছাড়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের চাহিদা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আশাকরি পাঁচ লাখ কর্মী আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারব। মালয়েশিয়াকে আমরা আমাদের সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দিয়েছি।
আমাদের যে ১৫২০ এজেন্সি আছে, তাদের সবার তালিকাই আমরা দিয়েছি। এবার তারাই তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। শূন্যে খরচে কর্মী নেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করতে গিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, সম্ভব্য ব্যয়টা নির্ধারণ করা না হলেও আগের তুলনায় খরচ কম হবে বলে আশা করছি। এটা নিশ্চিত করবে দেশটি। কোনো এজেন্সি যদি নিয়মের বাইরে যায়, সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় তারা তাদের মতো এবং আমরা আমাদের মতো ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, মেডিকেল, পাসপোর্ট ও করোনা টেস্টের খরচ কর্মী বহন করবে এবং মালয়েশিয়ায় গিয়ে কোয়ারেন্টিনের খরচও কর্মীকে বহন করতে হবে। কর্মীদের যাওয়া-আসার বিমান খরচ বহন করবে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা।
সমঝোতার আলোকেই সকল বিষয় সম্পন্ন করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমি বলতে পারবোনা। আমি আমাদের কথা বলতে পারবো। এসময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, কর্মীদের বেতন সর্বনিম্ন ১৫০০ হাজার রিঙ্গিত হবে। এছাড়াও কর্মী থাকা ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে।
এর আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় এই বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয় বাংলাদেশের। সেসময় আশা করা হচ্ছিল দ্রুতই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, কর্মী নেওয়ার বিমান ভাড়াসহ মালয়েশিয়া অংশের যাবতীয় খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা। আর বাংলাদেশে পাসপোর্ট করা, মেডিকেল, কল্যাণ বোর্ড সদস্য ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবেন কর্মী।
গেল জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এক চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা হবে না। কেবল নির্বাচিত ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি ও ২৫০টি সাব এজেন্টের মাধ্যমেই বাংলাদেশি কর্মীদের পাঠাতে হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ওই চিঠির উত্তরে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী মালয়েশিয়ার এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে বাংলাদেশিদের জন্য অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সব ধরনের সিন্ডিকেট বাতিল এবং সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজারটি উন্মুক্তের দাবি জানিয়ে আসছে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) সিন্ডিকেটবিরোধী মহাজোট।
তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সমঝোতা স্মারক হওয়ার পরও তথাকথিত সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানো যায়নি।
এদিকে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ঢাকায় সফররত মালয়েশিয়ার মন্ত্রী সারাভানান বলেছেন, ঢাকায় তার সফরের সময় কোনো বিক্ষোভ হলে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা আরও কমানো হবে।