মুহাম্মাদ রফি উসমানি। ছিলেন একজন পাকিস্তানের মুসলিম পণ্ডিত, আইনজ্ঞ এবং লেখক। যিনি পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম করাচির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দ ও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম এই ইসলামী ফিকাহবিদ।
তিনি আহকাম-ই-জাকাত, আল-তালাত আল-নাফিআহ আল-ফাত আল-মুলহিম, ইসলাম মে আওরাত কি হুকমরানি এবং নওদির আল-ফিকহ সহ বিভিন্ন বই লিখেছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, সহ-সভাপতি এবং উইফাকুল মাদারিস আল-আরবের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
শিক্ষা
মুফতি রফি’ উসমানি দারুল উলুম দেওবন্দে কুরআনের অর্ধেক মুখস্থ করেন এবং ১৯৪৮ সালের ১ মে পাকিস্তানে চলে যান। এরপর তিনি আরাম বাগের মসজিদ বাব আল-ইসলাম-এ কুরআন মুখস্ত করা সম্পন্ন করেন এবং ফিলিস্তিনি গ্র্যান্ড মুফতি, আমিন আল-হুসেইনির সাথে শেষ পাঠটি তেলাওয়াত করেন।
তিনি ১৯৫১ সালে দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে ঐতিহ্যবাহী “দারস-এ-নিজামী” এ স্নাতক সম্পন্ন করেন। এছাড়াও ১৩৭৮ হিজরীতে তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ফাজিল” পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মুফতি উসমানি ১৯৬০ সালে দারুল উলুম করাচিতে ইসলামী আইনশাস্ত্রের (ইফতা) বিশেষজ্ঞ ছিলেন। উসমানি রশিদ আহমেদ লুধিয়ানভির সাথে সহিহ বুখারি, আকবর আলী সাহারানপুরীর সাথে সহিহ মুসলিম, সাহাবান মেহমুদের সাথে সুনানে নাসাই, রি’ইয়াতুল্লাহর সাথে সুনানে আবু দাউদ এবং সালিমুল্লাহ খানের সাথে জামি আত-তিরমিজি অধ্যয়ন করেন।
কর্ম
মুফতি রফি’ উসমানি অল পাকিস্তান উলামা কাউন্সিল, কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি, রুয়েট-ই-হিলাল কমিটি এবং সিন্ধ সরকারের জাকাত কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। এমনকি তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের শরিয়ত আপিল বেঞ্চের উপদেষ্টাও ছিলেন। উইফাকুল মাদারিসল আরাবিয়ার পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এনইডি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন এবং উইফাকুল মাদারিস আল-আরাবিয়ার নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তিনি দারুল উলুম করাচির সভাপতি হিসেবে আব্দুল হাই আরিফির স্থলাভিষিক্ত হন। দারুল উলুম করাচিতে, তিনি ১৩৮০ হিজরি থেকে ১৩৯০ হিজরি পর্যন্ত দারস-এ-নিজামী সম্পর্কিত সমস্ত বই শিখেন। ১৩৯১ সালের পর থেকে তিনি সেমিনারিতে হাদিস ও ইফতা এর জ্ঞান শিক্ষা দেন। সহিহ মুসলিমের পাঠদান ও ইসলামী আইনশাস্ত্রে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে,উসমানি সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি) গ্রুপের সাথে জিহাদে অংশ নেন। তবে তিনি সব সময় শিক্ষার্থীদের রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলতেন।
রচনা
মুফতি রফি’ উসমানি আরবি ও উর্দু ভাষায় প্রায় ২৭টি বই লিখেছেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি দারুল উলুম করাচির আল-বালাগের উর্দু মাসিক-এ তার জিহাদ স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি উর্দু দৈনিক জাং এবং হুজির উর্দু মাসিক আল-ইরশাদ-এ নিয়মিত লেখা প্রকাশ করতেন। তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে:
• আহকাম-ই-জাকাত
• আলামত-ই কিয়ামত অউর নুজুল-ই মাসি
• আল-তালিকত আল-নাফিআহ আল-ফাত
• আল-মুলহিম
• বাই আল-ওয়াফা
• এছাড়াও আরো অসংখ্য কিতাব ও রচনা
মৃত্যু
উসমানি ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর করাচিতে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য, উইকিপিডিয়া