যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যার বিচারে যা ১৯০ মিলিয়ন বা ১৯ কোটিরও বেশি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র একটি অ্যান্টিবডি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮ কোটিরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

তবে সিডিসি’র প্রকাশিত অ্যান্টিবডি জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে তা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি। এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ সংক্রমণই নির্ণয় করা হয়নি অথবা সেটি উপসর্গবিহীন ছিল বা সংক্রমিত হওয়ার তথ্য রিপোর্ট করা হয়নি।

অ্যান্টিবডি লেভেলের জাতীয় স্তরের প্রতিনিধিত্বমূলক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছরের কমবয়সী প্রায় ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। গত শীত মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষ করে শিশু ও অল্পবয়সীরা এসময় ব্যাপকভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়। অবশ্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ওমিক্রন আসার আগেই মার্কিন জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের পূর্বে করোনায় সংক্রমণের প্রমাণ ছিল।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, নতুন তথ্য অনুসারে- করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিটি বয়সের মধ্যে সংক্রমণ বাড়িয়েছে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেকেই টিকার আওতার বাইরে থাকায় তাদের সংক্রমণের হার ছিল সবচেয়ে বেশি। একইসময়ে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ এবং করোনা টিকা নেওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হার কম ছিল।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওমিক্রনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ বেড়ে গেলেও ১১ বছর বা তার কমবয়সী শিশুদের মধ্যে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশের রক্তে সংক্রমণ-সম্পর্কিত অ্যান্টিবডি ছিল। যা আগের তিন মাসে ছিল ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ-সম্পর্কিত অ্যান্টিবডি ছিল ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এএফপি বলছে, গবেষণার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেওয়া প্রায় ৭৫ হাজার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা করা হয় ৪৫ হাজার রক্তের নমুনা।

গবেষণায় শুধুমাত্র আগের সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে, টিকার কারণে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি নয়। বয়স, লিঙ্গ এবং মেট্রোপলিটন স্ট্যাটাসের অবস্থা অনুসারে পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ সেরোলজি টাস্ক ফোর্সের সহকারি প্রধান ক্রিস্টি ক্লার্ক সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনায় সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে শরীরে অ্যান্টিবডি থাকার মানে এই নয় যে আপনি ভবিষ্যতের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত। পূর্ববর্তী সংক্রমণ গুরুতর রোগ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রুখতে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে বলে দেখা গেছে। তবে সংক্রমণের আগে বা পরে, করোনা টিকা যখনই নেওয়া হোক, সেটি অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেহেতু সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে শরীরে প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি কতদিন থাকছে সেটির সময়কাল অজানা, তাই কোভিড টিকাদান চালিয়ে যাওয়া এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

এএফপি বলছে, করোনা মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ৫০ বছর ও এর বেশি বয়সীদের টিকার চতুর্থ ডোজ দিচ্ছে। আর এর কমবয়সী সবাইকে তিনটি করে ডোজ দিচ্ছে। এছাড়া পাঁচ বছর বা এর কমবয়সী শিশুরা এখনও টিকা দেওয়ার জন্য যোগ্য নয়।

ক্রিস্টি ক্লার্ক বলছেন, ‘পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হলো- তাদেরকে এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিবেষ্টিত রাখা যারা করোনা টিকা নেওয়াসহ প্রতিরোধমূলক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।’

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সমালোচনার মুখে কানাডার স্পিকারের পদত্যাগ

নূর নিউজ

বাইডেনকে বাংলাদেশ ইস্যুতে কংগ্রেসম্যানদের চিঠি, খতিয়ে দেখছে মন্ত্রনালয়

নূর নিউজ

রাশিয়ার পরমাণু হুমকি: আইসিবিএম পরীক্ষা বাতিল করল আমেরিকা

নূর নিউজ