সৌদি আরবের আল-মদিনা মিউজিয়ামে রয়েছে ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ ও দুর্লভ ছবি। সেখানে মদিনার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে প্রায় দুই হাজার প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। জাদুঘরের একটি অংশে ছোট বাড়ি ও উঠান থেকে পবিত্র মসজিদে নববী কিভাবে বিশাল কমপ্লেক্সে পরিণত হলো তা তুলে ধরা হয়। ১৯৮৩ সালে আল-মদিনা মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
১৯০৮ সালে চালু হওয়া আল-হিজাজ রেলওয়ে স্টেশনকে রূপান্তর করে তা গড়ে তোলা হয়। এর মধ্যে থাকা ১২টি হলের মাধ্যমে প্রাচীনকালের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়। মহানবী (সা.)-এর যুগে মদিনার ঐতিহ্য, ইতিহাস, পরিবেশ ও প্রকৃতি, মহানবী সা. -এর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে, মুহাজির ও আনসার, মসজিদে নববী, খলিফাদের যুগে মদিনা, প্রথম ও দ্বিতীয় সাউদি যুগে মদিনা ও বাদশাহ আবদুল আজিজ যুগে মদিনার ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মদিনায় অবস্থিত দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর এনডাউমেন্ট লাইব্রেরিতে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর হিজরতের পথ, আরবি ক্যালিগ্রাফি ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপির সমাহার। এই কমপ্লেক্সের সেক্রেটারি জেনারেল ফাহাদ আল-ওয়াহবি বলেন, ১৪৩৭ সালে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে তা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মদিনা অঞ্চলের গভর্নরের নেতৃত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তা পরিচালিত হয়। কমপ্লেক্সের প্রধান লক্ষ্য হলো পাণ্ডুলিপি ও মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা এবং দর্শকদের কাছে তা উপলব্ধি করা। এতে থাকা পাণ্ডুলিপি, দুর্লভ বই ও মূল্যবান সংগ্রহের ডিজিটাল ক্যাটালগিং সেন্টার রয়েছে। বিশেষায়িত গবেষণা প্রকাশের জন্য রয়েছে দ্য জার্নাল অব দ্য কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স। সুবিশাল ভবনের সারিবদ্ধ বইয়ের তাক পাঠকদের বিমোহিত করে।
পবিত্র মসজিদে নববী থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে মসজিদের নির্মাণ নিয়ে প্রদর্শনী। এতে রয়েছে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ সা. -এর হিজরত যাত্রার পটভূমি ও বিভিন্ন গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি। দার আল-মদিনাহ মিউজিয়ামের পরিচালক হাসান তাহের বলেন, ‘মহানবী সা. -এর জীবনী এবং মদিনার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে এটিই প্রথম ও সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত মিউজিয়াম।
এই মিউজিয়ামের চারটি হলে রয়েছে ইসলামের ইতিহাসের প্রাচীন সংগ্রহ, মদিনার দুর্লভ ছবির সংগ্রহ। তাতে পুরাকীর্তি, হস্তশিল্প, পাণ্ডুলিপি, নথি, চিঠিপত্র, পুরনো প্রকাশনা, ডাকটিকিট, ফটোগ্রাফ, শিল্পকর্মসহ দুই হারের বেশি প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। এখান থেকে মদিনার ইতিহাস ও স্থাপত্য নিয়ে বিশেষ সাময়িকী বের করা হয়।
আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেদ্দার হজ টার্মিনালে ‘ফার্স্ট হাউস’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে ইসলামী আর্টস বিয়েনাল প্রদর্শনী শুরু হবে। এতে আরবি ক্যালিগ্রাফি, আরবি অক্ষর, মানব ইতিহাসে জ্ঞান সংরক্ষণের পদ্ধতি, হিজরতের পথ ও প্রভাব তুলে ধরা হবে। সৌদির সাংস্কৃতিক সংস্থা দ্য দিরিয়াহ বিয়েনাল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে প্রতি দুই বছর পর তা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত বছরের ৩১ জুলাই জাহরান এলাকায় মুহাম্মদ সা. -এর হিজরত নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু করে কিং আবদুল আজিজ সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড কালচার (ইথরা)। সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, মদিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ৯ মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে। এ মাসে সংস্থাটির পক্ষ থেকে হিজরত বিষয়ক একটি বই প্রকাশ পাবে।