বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পিটার ডি হাসকে মনোনীত করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৯ জুলাই হোয়াইট হাউজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই তথ্য জানানো হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিজের নিশ্চিতকরণের শুনানি চলাকালে বুধবার সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্যদের সামনে তিনি বক্তব্য রাখেন।
নিউজ এইটিন ডট কম এ খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিজ বক্তব্যে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং অংশীদার। একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সমগ্র অঞ্চলকেই উপকৃত করবে এবং (রাষ্ট্রদূত) নিশ্চিত হলে আমি এমন নীতিমালা এগিয়ে নেবো যা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে উন্নত করবে এবং একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, পরস্পর সংযুক্ত, প্রতিরোধক্ষম ও নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত করবে। দুই দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, জনস্বাস্থ্য এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে একসঙ্গে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দুই জাতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিও অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের ‘জনগণের সাথে জনগণের’ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করতে সাহায্য করছে।
নিশ্চিত হলে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত করার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের পূর্ণ ক্ষমতা উপলব্ধি করার জন্য, নিজেদের প্রকাশ করার স্বাধীনতা পেতে হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের (প্রতিশোধ বা ক্ষতির আশঙ্কা ছাড়াই) অবাধ কার্যক্রমের প্রচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পিটার হাস জানান, তিনি ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ জোরদার করতে এবং মানবাধিকার রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। বার্মায় (মিয়ানমারে) সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করে। মানবিক সহায়তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম আন্তর্জাতিক দাতা হিসেবে সমর্থন করেছে।
তিনি জানান, নিশ্চিত হলে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজ অব্যাহত রাখবেন এবং (যে যেখানেই থাকুন না কেন) সমস্ত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের সুরক্ষার পক্ষে সোচ্চার থাকবেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান, যা এই বছর ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দেশটির প্রযুক্তি ও জ্ঞানের মাধ্যমে এবং স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক সংস্কার প্রচার করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধারে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভ্যাক্স এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বাংলাদেশক ১ কোটি ১৫ লাখ করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ অনুদান দিয়েছে এবং আগামী মাসগুলোতে আরো ভ্যাকসিন অনুদান প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট পিটার হাসের মনোনয়ন নিশ্চিত করলে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের উত্তরসূরি হবেন। পেশায় কূটনীতিক পিটার হাস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভাগে উপ সহকারী মুখ্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এর আগে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের মুম্বাই মিশনে কাজ করেছিলেন।