নিজের আত্মাকে যাবতীয় গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ রাখার নাম আত্মশুদ্ধি। আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে দেহ ও আত্মা এ দুয়ের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। দেহের রয়েছে দুটি অবস্থা সুস্থতা ও অসুস্থতা। ঠিক তেমনি আত্মারও রয়েছে সুস্থতা ও অসুস্থতা। দেহ অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে হয়, তেমনি আত্মা রোগাক্রান্ত হলে আত্মিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে হয়। আর একেই বলে আত্মশুদ্ধি বা তাজকিয়াতুন নফস।
আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে।
وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বলেন।
, إِنَّ اللهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা মালের দিকে দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে’।
কুরআন হাদিসের বক্তব্যের মাধ্যমে, বুঝতে পারলাম।
অন্তরের চিকিৎসা প্রয়োজন।
ইসলামি স্কলারদের মতে, আত্মশুদ্ধির পথ হলো সহিহ দ্বীনি ইলমচর্চা, হালাল উপার্জন, যথার্থভাবে ফরজগুলো আদায়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ, মৃত্যু ও আখিরাতের চিন্তা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, সর্বাবস্থায় ও সব কাজে সুন্নতের অনুসরণ, সুন্দর চরিত্র ও আচরণ, সাহাবিদের জীবনী অধ্যয়ন, বেশি বেশি দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার, সৎ গুণাবলি অর্জন করা।
আর কতকাল বিভ্রান্তিতে থাকবো।
আরবি সাহিত্যের বিখ্যাত কিতাব মাকামাতে হারীরীর
লিখাটা হৃদয়ের গহীনে দাগ কেটে গেলো।
কতকাল তুমি তোমার বিভ্রান্তিতে অবিচল থাকবে। এবং তোমার বিরুদ্ধাচরণের চারণভূমিকে উপভোগ্য মনে করবে। কখন তুমি তোমার দম্ভের প্রান্তসীমায় পৌঁছবে না? এবং তোমার খেলাধুলা থেকে বিরত হবে না? তুমি তোমার অপরাধ নিকটবর্তী লোক থেক লুকোচ্ছ।
অথচ তোমার প্রভুর কাছে কোন গোপন বিষয় গোপন নেই। তুমি কি ধারণা করছ যে, তোমার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসবে তখন তোমার অবস্থা তোমার উপকার আসবে?অথবা তোমার কৃতকর্মের জন্য তুমাকে ধ্বংস করবে তখন কি তোমার সম্পদ পদবী তোমাকে রক্ষা করতে পারবে?তুমি কেন হেদায়েতের পথে চলছ না। এবং তোমার অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করছ না? তুমি তোমার নফছকে বারণ করছ না।
অথচ তোমার নফছ তোমার বড় শত্রু।
তাই নফছের বিরুদ্ধে লড়াই করার বড় হাতিয়ার হচ্ছে।
বেশি বেশি জিকির করা : জিকির মানবাত্মার রোগ-ব্যাধি দূর করে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিশেষে একজন মুমিন হিসেবে আমার আপনার অন্তরের চিকিৎসা প্রয়োজন।
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, পুরো শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, পুরো শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সেই গোশতের টুকরাটি হলো অন্তর (কলব)।
’ (সহিহ বোখারি : ৫২)
কবি বড় সুন্দর করে বলেছেন।
ফুলের মতো জীবন চাহি খুব সুগন্ধী ময়।
আর আত্মা পরিশুদ্ধ হলে মুমিনের অন্তরে হেদায়েতের সুভাস ছড়িয়ে যাবে। যার দ্বারা অন্য মুমিন উপকৃতি হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন
হযরত ফাদ্বালা ইবনে উবায়দ রাঃ বলেন,আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি-
المُجاهد مَن جاهد نفسه
প্রকৃত মুজাহিদ হলো হলো সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে।
ইমাম তিরমিযি হাদীসটি সম্পর্কে বলেন,হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
তাযকিয়ার সাধনা ও তাহলিয়াকে মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখা জরুরি। কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক না।
কারণ অন্তরকে অসুস্থ রাখা যাবে না।
আর আমাদের দুশমন শয়তান সে তো মৃত্যুবরণ করে না।
অন্তরের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই নিসবত প্রয়োজ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।”
তাই বিজ্ঞ নেককার আলেম ওলামাদের নিকট থেকে।
রুহের খোরাক জোগাতে হবে।
জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি রহঃ কবিতা কত সুন্দর করে বলে গিয়েছেন।
মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়। আলো দেওয়ার জন্য প্রথম নিজেকেই পুড়তে হয়।
আত্মশুদ্ধি করার জন্য ধৈর্যধারণ করতে হবে।
গুনাহের কাজ থেকে বাঁচার কষ্ট স্বীকার করতে হবে।
রুমি রহ. কি চমৎকার বলেছেন।
মুসাফির, নামাজি, সন্যাসী
কিছুই ব্যাপার না।
আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,
আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার
আসো, আবারো, আসো আসো।
লেখক, ইমরান হোসেন
শিক্ষার্থী জামিয়া হোসাইন আশ্রাফুল উলুম বড় কাটরা মাদ্রাসা।