আন্দোলনে বিএনপিকে বিকল্প কর্মসূচি রাখার পরামর্শ দিলেন শরিকরা

একদফার আন্দোলন ঘিরে সরকারের দমন-পীড়ন, হামলা-মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে কর্মসূচি প্রণয়নে বিএনপিকে আরও কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুগপতের শরিকরা। উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতিতে যেন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা যায়, সেজন্য কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্ল্যান ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ রাখার প্রস্তাব করেছেন তারা। শরিকদের আশঙ্কা, আন্দোলন দমাতে সামনে হামলা-মামলা ও দমন-পীড়নের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি বিবেচনায় হঠাৎ করে কর্মসূচি পরিবর্তন করতে হতে পারে। পাশাপাশি সরকারের উসকানি ও সহিংসতার মুখে বিরোধী দলের আন্দোলনকারীরা যেন সহিংস না হন, তা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বুধবার রাতে বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের পক্ষ থেকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে ঢাকায় গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের পর হঠাৎ করে পরদিন রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থানের মতো কঠোর ও সাংঘর্ষিক কর্মসূচি দেয় বিএনপি। দলটির এমন সিদ্ধান্তে যুগপতের শরিকরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তাদের এ ক্ষোভের বিষয়টি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
সূত্র বলছে, বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হয়—মহাসমাবেশের মতো সফল কর্মসূচির পর কেন অবস্থানের মতো কঠোর ও সাংঘর্ষিক কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হলো? আর কর্মসূচি দেওয়া হলেও তা সফলে নেতাকর্মীরা কেন ব্যাপক সংখ্যায় মাঠে নামল না? এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনের গতি ৯০ শতাংশ থেকে ফের ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। তাদের দাবি, প্রতিটি পয়েন্টে ২০-২৫ হাজার নেতাকর্মী জড়ো হলে পুলিশ এমন মারমুখী ভূমিকায় যেতে পারত না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।

তখন বিএনপির পক্ষ থেকে এর সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে ভবিষ্যতে কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মী কম হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের কথা বলা হয়। তারা মনে করেন, মহাসমাবেশ যতটা সুন্দর ও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে অবস্থান কর্মসূচি ততটা সফল করা সম্ভব হয়নি। এতে করে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছে।

এদিকে অভিযোগ আছে, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে শরিকদের কর্মসূচির বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি সামনে আসে। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে কর্মসূচি প্রণয়নে এই সমন্বয়হীনতা নিরসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন যুগপতের শরিকরা। এ লক্ষ্যে সময় দিয়ে শরিকদের কর্মসূচি জানানোর কথা বলা হয়। যাতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পায় তারা।

জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে একদফার আন্দোলন সফলে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার লোক বিশেষ করে ছাত্র, শ্রমিক ও আইনজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে লিখিত আকারে কর্মসূচির প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়। গণতন্ত্র মঞ্চ শিগগির তাদের প্রস্তাবনা লিখিত আকারে বিএনপিকে জানাবে। এদিকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ, অবরোধ ও ঘেরাওয়ের প্রস্তাবনা দিয়েছে। তবে ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচির কোনো প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু কালবেলাকে বলেন, একদফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি কী হতে পারে তা দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপিকে লিখিতভাবে জানাবে গণতন্ত্র মঞ্চ। আগামী সপ্তাহে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষিত হতে পারে।

নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, একদফা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে এখন শরিক দল ও জোটগুলোর মতামত নিচ্ছে বিএনপি। এরপর দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনাসাপেক্ষে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে যা দ্রুতই ঘোষণা করা হবে।

এদিকে আগস্ট মাসেও কর্মসূচি থাকবে জানিয়ে ১২ দলীয় জোটের একজন নেতা বলেন, শোকের মাসে যেমন রাজনৈতিক আন্দোলন করাটা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়, তেমনি সরকারও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে—এটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এমন অবস্থায় কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, বিএনপির সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচির কোনো প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন কৌশলে পরিবর্তন এনেছে বিএনপি। ফলে টানা কর্মসূচির পরিবর্তে এখন বিরতি দিয়ে কর্মসূচি আসতে পারে। আর শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচির পরিবর্তে আপাতত কেন্দ্র ও তৃণমূল ঘুরেফিরে কর্মসূচি পালিত হতে পারে। চলতি আগস্ট মাসে এভাবে কর্মসূচি চলবে। এই সময়ে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি হতে পারে। পহেলা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর সরকারবিরোধী আন্দোলন ফের বেগবান করবে বিএনপি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

তারেকের ৯ বছর ও জুবাইদার তিন বছরের কারাদণ্ড

নূর নিউজ

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ, এখানে নাস্তিক নেই: গয়েশ্বর

নূর নিউজ

বিএনপি-জামায়াত ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা : হাছান মাহমুদ

নূর নিউজ