আফগানিস্তানে ভয়েস অফ আমেরিকা ও বিবিসির সংবাদ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে তালিবান

ইসলামাবাদ — আফগানিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনগুলোকে ভয়েস অফ আমেরিকা ও ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) সংবাদ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালিবান।

গত অগাস্টে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ইসলামপন্থী গ্রুপটি আফগান গণমাধ্যমের ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তার মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞাটি সর্বশেষ।

ভয়েস অফ আমেরিকা, যার সদর দপ্তর ওয়াশিংটনে, সংস্থাটির অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তালিবানের নিন্দা জানায়।

“আমরা তালিবানকে এই উদ্বেগজনক ও দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য বলছি”, ভয়েস অফ আমেরিকার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইয়োলান্ডা লোপেজ রবিবার (২৭ মার্চ) এক বিবৃতিতে বলেছেন। “তালিবান যে বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করছে, তা আফগানিস্তানের জনগণের প্রাপ্য অধিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী”, লোপেজ বলেন৷

আমেরিকান সম্প্রচারকারী সংস্থাটি আফগানিস্তানে দুটি প্রধান কথ্য ভাষা পশতু ও দারিতে আধা ঘণ্টার সংবাদ বুলেটিন প্রচার করে। সপ্তাহে পাঁচ দিন সংস্থাটি এর আফগান অংশীদার, টোলো নিউজ ও শামশাদ টিভির মাধ্যমে সংবাদ সম্প্রচার করে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ভাষা প্রধানও তালিবানকে অবিলম্বে তাদের সংবাদ বুলেটিনগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তারিক কাফালা রবিবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন, “তালিবান আমাদের টিভি অংশীদারদের তাদের এয়ারওয়েভ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর আফগানিস্তানে পশতু, ফার্সি ও উজবেক ভাষায় বিবিসির টিভি সংবাদ বুলেটিনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে”।

“আফগানিস্তানের জনগণের জন্য অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার মধ্যে এটি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা”, কাফালা বলেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “৬ কোটির বেশি আফগান প্রতি সপ্তাহে টিভিতে বিবিসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা উপভোগ করেন এবং তারা যাতে ভবিষ্যতে সম্প্রচার দেখা থেকে বঞ্চিত না হন, সেটা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”।

তালিবানের তথ্য মন্ত্রকের একজন মুখপাত্রের কাছে, তারা আফগান চ্যানেলগুলোকে তাদের এয়ারওয়েজ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে পরে মন্তব্য জানাবেন।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচকেরা বলছেন, আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার অবনতি হয়েছে।

আফগান সাংবাদিকদের বারবার আটক করা হচ্ছে এবং তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। অন্তর্বর্তীকালের তালিবান সরকার “সাংবাদিকতার নিয়ম”–এর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে “ভালো বিষয় উপভোগ করা এবং মন্দ বিষয় নিষিদ্ধ করা” বিষয়ে গোষ্ঠীটির ইসলামিক মতবাদের ব্যাখ্যা মেনে চলার বিষয়টিও রয়েছে।

তালিবানদের ভয়ে বা নতুন শাসকদের অধীনে তাদের পেশাগত জটিলতার সম্ভাবনার কারণে শত শত সাংবাদিকও অগাস্ট থেকে আফগানিস্তান ছেড়েছেন।

আরএসএফ জরিপ অনুসারে, তালিবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ১৫ অগাস্ট থেকে ৬ হাজার ৪০০–এরও বেশি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম কর্মচারি তাদের চাকরি হারিয়েছেন।

তালিবান আফগান মেয়েদের স্কুল বন্ধ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়েছে। এর মধ্যেই ভয়েস অফ আমেরিকা ও বিবিসি অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা।

আফগান নারী অধিকার কর্মীরা এবং মেয়েরা শনিবার রাস্তায় নেমেছে। তারা তালিবানের কাছে মেয়েদের জন্য আবার স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে মেয়েদের স্কুল খুলতে ব্যর্থ হলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করার অঙ্গীকার করেছেন তারা।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির তালিকায় বাংলাদেশ অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ

আনসারুল হক

চীনের প্রেসিডেন্ট শি, প্রধানমন্ত্রী কিয়াং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী

নূর নিউজ

ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করে জরিমানা গুনলেন সাংবাদিক

নূর নিউজ