পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তান সংসদের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়ে বলেছেন তালেবানকেও ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর প্রতিবেশী সব দেশের অংশগ্রহণে তারা নতুন এমন একটি পরিকল্পনা তুলে ধরে যার ভিত্তিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশটির অবস্থা উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য চীন, ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের অংশগ্রহণে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানে আফগান প্রতিবেশীদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় তৃতীয় সম্মেলনে তালেবানকে আমন্ত্রণ জানানোর খবর থেকে বোঝা যায় তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতির কারণে এবারের সম্মেলন এর আগের দুটি সম্মেলন থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হবে।
এর আগে প্রথম দফায় ১৮ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদে এবং দ্বিতীয় দফায় ২৭ অক্টোবর তেহরানে আফগান প্রতিবেশী দেশগুলোর অংশগ্রহণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি না পাওয়ায় ওই দুই সম্মেলনে তারা অংশ নিতে পারেনি। তালেবানকে ছাড়াই ওই দুই সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলো আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে সেদেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় সবার অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য তালেবানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
তালেবান গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পরপরই সেদেশের সব দল, মত, জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালেবান এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আফগান জনগণ ও আন্তর্জাতিক সমাজের দাবি বাস্তবায়নে তালেবান গড়িমসি করায় ধারণা করা হচ্ছে তালেবানের প্রতি পুরো আন্তর্জাতিক সমাজের স্বীকৃতি আদায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।
প্রতিবেশী দেশগুলো আর্থ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত দিক বিবেচনা করে আফগানিস্তানের ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ পর্যন্ত তারা দুটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলো আফগানিস্তানে বিশেষ একটি মতাদর্শের শাসনের পরিবর্তে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিচ্ছে। যাইহোক এবারের আসন্ন ইসলামাবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য তালেবান প্রতিনিধিদেরকেও আমন্ত্রণ জানানোয় আফগানিস্তানের ভবিষ্যত রাজনৈতিক কাঠামোর বিষয়ে তালেবান তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে।
তবে প্রতিবেশী দেশগুলো আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক হলেও পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজে তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আমির খান মোত্তাকির সাম্প্রতিক বক্তব্য সবাইকে হতাশ করেছে। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান তালেবানের শাসনে সবার উপস্থিতি রয়েছে কেননা আফগানিস্তানের সব এলাকার মানুষই এখানে আছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী সেখানে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে