আমলের প্রভাব দ্বারা সমাজের পরিবেশকে পরিবর্তন করতে হবে বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) হাজীপাড়া ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে জুমার বয়ানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এ কথা বলেন।
মেহনতের সাথে আমল করতে হবে উল্লেখ করে শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, প্রত্যেকটা আমলের আগে-পরে কিছু মেহনত আছে। আমলের পরিপূর্ণ প্রভাব পাওয়ার জন্য মেহনতের সাথে আমলটি করতে হয়। যেমন, নামাজ পড়ার আগে কিছু মেহনত আছে। নামাজের জন্য তৈরী হওয়া, ওযু করা, নামাজের স্থানকে পাক করা। হজ্ব করার আগে কিছু মেহনত আছে, যাকাত দেওয়ার আগে মেহনত আছে, রোজা রাখার আগে মেহনত আছে। মেহনত অনুযায়ী আমল হলে আল্লাহর কাছে আমলটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়।
দায়সারাভাবে আমল করেই আজ আমরা ক্ষান্ত থাকছি
তিনি বলেন, আমলটি শুদ্ধতার সাথে করলে ‘আদায় হয়ে যাবে’ ঠিক-ই, কিন্তু মেহনত ছাড়া আমলের যথার্থ ফলাফল পাওয়া যায় না। আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা মিলে না।
আমলকারীর সংখ্যা বাড়লেও আমলের প্রভাব বাড়েনি উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমাদের নামাজির সংখ্যা বেড়েছে। রোজাদারের সংখ্যা বেড়েছে। হজ্ব পালনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ওয়াজ-মাহফিলের সংখ্যা বেড়েছে। বই-কিতবের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আফসোস, আমলের আগে-পরের মেহনতের গুরুত্ব কমেছে। দায়সারাভাবে আমল করেই আমরা ক্ষান্ত থাকছি। যে কারণে আমরা আমলের পরিপূর্ণ ফায়দা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমল করলে আল্লাহ তাআলা যে পরিবর্তনের ওয়াদা করেছেন তা আমরা পাচ্ছি না। সবকিছু থাকা সত্ত্বেও পরিবেশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
সাহাবায়ে কেরাম ইবাদাতকে মসজিদে রেখে যেতেন না
মসজিদের জিন্দেগীর মাধ্যমে সামাজিক জিন্দেগীকে পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে শাইখুল ইসলাম বলেন, আমরা এত এত আমল করছি, কিন্তু তারপরও আমাদের সমাজ কেন পরিবর্তন হচ্ছে না? কেন কোনো ফায়দা হচ্ছে না? কারণ হজ্ব, ওমরাহ, যাকাত, নামাজ যে শিক্ষা আমাকে দিলো, আমি সে শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছি না। আমার মসজিদের জিন্দেগীর মাধ্যমে আমার সামাজিক জিন্দেগীর মধ্যেও একটা প্রভাব আসার দরকার ছিলো। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ইবাদাতকে মসজিদে রেখে যেতেন না। নিজের পরিবেশে নিয়ে যেতেন। সেজন্য সাহাবায়ে কেরাম ‘সংখ্যায়’ নগণ্য হলেও তাঁরা যেখানেই গিয়েছেন সমাজকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
একজন নামাজি ও বে-নামাজির চলাফেরা কখনও এক হতে পারে না উল্লেখ করে ফিদায়ে মিল্লাতের এই খলীফা বলেন, একজন নামাজি ব্যক্তির চলাফেরা, কথাবার্তা, থাকা-খাওয়া কোনো কিছুতেই আজ নামাজের কোনো আছর-প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায় না। বে-নামাজির মতোই নামাজি ব্যাক্তির চালচলন দেখা যায়। অথচ এমনটা হওয়া কখনোই কাম্য নয়।
ইবাদাতের প্রভাব গ্রহণ করতে না পারলে সমাজ তো দূরের কথা, নিজেরও পরিবর্তন হবে না
সবার আগে নিজেকে পরিবর্তনের তাগাদা দিয়ে এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজেকে দুষতে হবে, ‘আমার কারণে সমাজের এমন অবস্থা হয়েছে।’ সমাজের ভয়ঙ্কর অবস্থার জন্য নিজেকেই দায়ী করতে হবে। কারণ, আমি তো নামাজ পড়ছি, কিন্তু আমার নামাজের প্রভাব কোথায়? আমি তো রোজা রাখছি, কিন্তু আমার রোজার আছর কোথায়? আমি তো প্রতি বছর হজ্ব পালন করছি, কিন্তু আমার হজ্বের ফলাফল কোথায়? ইবাদাতের প্রভাব গ্রহণ করতে না পারলে সমাজ তো দূরের কথা, আমার নিজেরও পরিবর্তন হবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইবাদাতের প্রভাব দ্বারা সমাজ পরিবর্তনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
সুত্র, পাথেয়