আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় ছাত্রলীগ : নুর

ছাত্র অধিকার পরিষদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

রোববার (৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে নুরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিরোধী দলসমূহের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, হয়রানি, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ রেজাউলকে পিটিয়ে হত্যার বিচার এবং টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার ৩৪ জন বুয়েট শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে গত ২ আগস্ট ছাত্রঅধিকার পরিষদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তখন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হামলায় তিনি ছাড়াও আরিফুল ইসলাম আদীব, সাব্বির হোসাইন, আব্দুজ জাহের, তারিকুল ইসলাম, মেহেরাব হোসেন মেহেদী, তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, নেওয়াজ খান বাপ্পি, কাওসার আলি, রাকিব হাসান, আকাশ চৌধুরী, সাদ শিকদার, রাজিব হোসেন, তোফায়েল আহমেদ, ইউসুফ রায়হান, আনোয়ার হোসেন রনি, রবিউল ইসলাম, রাজিব মোল্লাসহ অনেকে আহত হন।’

নুর আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ সেদিন যেভাবে চতুর্দিক থেকে ঘিরে চাবির রিং, কলম, স্টিলের চেইনসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে তাকে উদ্দেশ করে আঘাত করে- এ ঘটনায় স্পষ্ট হয়, তাকে হত্যা করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।’

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের এই সভাপতি বলেন, ‘গত ২ আগস্ট গভীর রাতে ডিবি পুলিশ তার বাসায় কথিত অভিযান চালিয়ে ছাত্র ঞঅধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেপ্তার করে। বিন ইয়ামিনকে গ্রেপ্তারের আগে তার বাবা রফিকুল ইসলামকে মোহাম্মদপুর থেকে আটক করে ৮ ঘণ্টা ডিবির গাড়িতে বসিয়ে রেখে বিন ইয়ামিনকে খুঁজতে থাকে। এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিবি যখন ওইদিন রাত ২টায় তার বাসায় এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে, তখন তার বাসায় ২ মাস ও সাড়ে ৩ বছর বয়সী দুটি বাচ্চা এবং হজফেরত বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ছিলেন। সে কারণে ডিবি পুলিশকে সকালে আসতে বললেও তারা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। দুটি দরজা ভেঙে তার বাসায় ঢুকে এবং ডিবি পুলিশের এডিসি রাজিবুল অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে মদ্যপ অবস্থায় ডিবি পুলিশের ডিসি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও হুমকি প্রদান করেন।’ মম ্

ছাত্রলীগ কর্তৃক হত্যাচেষ্টার কারণ প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ কেন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল তা ওইদিন রাতে ডিবি কর্মকর্তার কথোপকথন এবং প্রশ্নেও কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। কেন তিনি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে মিলে সরকার পতনের আন্দোলন করছেন- ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা সেজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি দাবি করেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির সাথে কার সম্পর্ক থাকবে, কে কার সাথে আন্দোলন করবে কি করবে না- সে বিষয়ে ডিবি পুলিশের প্রশ্ন তোলা অবান্তর।’

গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বর্তমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাগরিকদের রাজপথে আন্দোলনে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে রাজপথে আন্দোলনকারী দলগুলোর একে-অপরের প্রতি সহমর্মিতা ও সমন্বয় খুবই প্রয়োজন।’

নুরুল হক নুর জানান, তিনি যেন পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা নিতে না পারেন- সেজন্য ৩ আগস্ট সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বেসরকারি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে রিলিজ দিতে বাধ্য করে। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ায় তিনি ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। সেজন্য গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান নুর। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যুগপৎ আন্দোলনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন ব্যক্তিদেরও ধন্যবাদ জানান নুর, যারা তার জন্য সহমর্মিতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুর বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সামগ্রিকভাবে যেভাবে সহিংস হয়ে উঠছে- তার সম্পূর্ণ দায় এ ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের। সরকারকে অনুরোধ করব- দেশে সংঘাত-সহিংসতা উস্কে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। জনগণের গণদাবি- অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। ছাত্রনেতা বিন ইয়ামিনসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।’

তিনি বলেন, ‘সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রশাসনে দুর্বৃত্তায়ন ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্নমত দমন করে ক্ষমতায় থাকার কৌশল নিয়েছে। তাই জনগণের প্রতি আহ্বান জানাব- রাজপথে নেমে গণআন্দোলন গড়ে তুলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করুন। জনতার বিজয় হবেই।’

এ জাতীয় আরো সংবাদ

‘এবার লকডাউনে পুলিশ কাউকেই ছাড় দেবে না’

আনসারুল হক

যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ কখনো তত্ত্বাবধায়কের কথা বলেনি: কাদের

নূর নিউজ

দেশে বিদ্যুতের অভাব নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নূর নিউজ