ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত অধিকৃত এলাকায় আরব ও ইহুদিদের মধ্যে অব্যাহত সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে বসবাসরত আরবদের শত্রু নয়।
অধিকৃত ফিলিস্তিন তথা ইসরাইলে জনসংখ্যার শ্রেণী বিন্যাস ও সমাজ কাঠামো চরম বৈষম্যমূলক। আর এটাই ইসরাইলের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইহুদিবাদীরা নিজেদেরকে এক নম্বর নাগরিক বলে মনে করে এবং ইসরাইলের মন্ত্রিসভার দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকম। এ কারণেই প্রায়ই ইসরাইলে জাতিগত সংঘাত বাধে। ইসরাইলে আরবরা হচ্ছে সংখ্যালঘু জাতি এবং তারা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ যারা নিজেদেরকে আসল ফিলিস্তিনি বলে মনে করে যদিও তারা ইসরাইলি নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করছে।
বেশিরভাগ আরবরা আরবি এবং হিব্রু দুই ভাষাতেই পারদর্শী এবং তারা জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজার মুসলমানদের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল। এ কারণে বহু আরব নাগরিক ইসরাইলের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। ইসরাইলে বসবাসকারী আরবরা সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্যের অভিযোগ করে থাকে। আবাসিক, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। এসব বৈষম্যের কারণে আরব ও ইহুদিবাদীদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ইসরাইলি নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে সেখানকার অর্ধেক জনগোষ্ঠী দরিদ্র শ্রেণীর এবং তারা সবাই আরব। ইসরাইলি দৈনিক হারেতসের সাংবাদিক জ্যাক খুরি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইসরাইলে আরব নাগরিকদের বর্তমান প্রজন্মকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় এবং রাজনৈতিক উপায়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ব্যাপারে তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়। এসব কারণে তারা প্রায়ই প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াও ইসরাইলের ইহুদিবাদীরা সেখানকার আরবদেরকে অতি তুচ্ছজ্ঞান মনে করে। এটাও তাদের মধ্যে উত্তেজনা ও রেষারেষির অন্যতম কারণ। ইসরাইলি নাগরিকদের একটা বিরাট অংশ আরবদেরকে ওই সমাজের জন্য বড় হুমকি বলে মনে করে। এ কারণে তারা আরবদেরকে তো আপন মনে করেই না বরং তাদের সঙ্গে সহিংসতায় লিপ্ত হয়। অধিকৃত ফিলিস্তিনে গত মাসে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছর বিভিন্ন সংঘর্ষে ইসরাইলে অন্তত ১০০ আরব নিহত হয়েছে। উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় ইসরাইলি সমাজে আরব ও ইহুদিদের মধ্যকার সম্পর্কে ক্রমেই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। ফলে ইসরাইল ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সংকটে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কার মাত্রা এতটাই বেশি যে এর আগে ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট রুইন রিউলিন গৃহযুদ্ধের ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান করা উচিত তা না হলে আমরা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারি এবং আমাদের অস্তিত্ব আগের চেয়ে আরো বেশি বিপদের সম্মুখীন হবে।
ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও আরব ও ইহুদিদের উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বহু বছর ধরে এ সমস্যাকে আমরা উপেক্ষা করে এসেছি। তবে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আরবদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে বর্তমান মন্ত্রিসভা তাদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নেবে। তিনি দাবি করেন, ইসরাইলের আরব নাগরিকদেরকে এটা বুঝতে হবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের শত্রু নয় বরং তাদের সমস্যার সমাধান করতে চায়। উল্লেখ ইসরাইলে অনেক ইহুদি ও খ্রিস্টান রয়েছে, কিছু মুসলমানও রয়েছে যারা আরব হিসেবে পরিচিত