রমজান মাসে রোজা রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। তবে রোজা অবস্থায় যদি কোনো রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ সেবন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে—এই চিকিৎসা গ্রহণে রোজা ভাঙবে কি না? ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।
রোজায় টিকা বা ইনজেকশন নেওয়ার বিধান
রগে, চামড়া বা মাংসপেশিতে এমনকি পেটে ইনজেকশন দিলেও (যেমন কুকুর কামড় দিলে পেটে দেওয়া হয়), রোজা ভাঙবে না। কারণ, এসব রোজা ভাঙার কারণের মধ্যে পড়ে না। রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে, স্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে পেটে বা মস্তিষ্কে কোনো কিছু প্রবেশ করা। অস্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে শরীরের ভেতরে কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
টিকা-ইনজেকশন বা ইনসুলিনের ব্যাপারে জমহুর ওলামাদের রায় এটাই। এসব কোনোকিছু সরাসরি খাদ্যনালী অতিক্রম করে না। এ মাসয়ালায় মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা একমত পোষণ করেছেন। (তথ্যসূত্র: ইমদাদুল ফতোয়া: ২/১৪৪-১৪৭—৩/১৩৩-১৩৪; ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৬/৪০-৪০৯; ফতোয়া রহিমিয়া: ৭/২৫৭; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪২২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/১৭৩-১৭৯; আপকি মাসায়িল আওর উনকা হল: ৩/২১২; ইমদাদুল ফতোয়া)
রোজায় ইনহেলার নেওয়ার বিধান
ইনহেলারের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বিশেষ পদ্ধতিতে মুখের ভেতরে স্প্রে করতে হয়। এতে শ্বাসরুদ্ধ জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস চলাচলের কষ্ট দূর হয়। যদিও স্প্রে করার সময় ওষুধটি গ্যাসের মতো দেখায়, কিন্তু বাস্তবে এটি তরল ওষুধ। তাই মুখের ভেতরে স্প্রে করার কারণে রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে ওই রোজা কাজা আদায় করতে হবে।
অনেককে বলতে শোনা যায়— ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তাদের এ উক্তিটি সঠিক নয়। কেননা কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে অতি প্রয়োজনে কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে অতি প্রয়োজনে খাওয়ার কারণে ভেঙে যাবে। সুতরাং ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে রোজার কাজা দিতে হবে। তবে, স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (তথ্যসূত্র: ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫৯; হেদায়া: ১/১২০)
রোজায় ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম
কোনো কোনো চিকিৎসক বলেন, সেহরিতে এক ডোজ ইনহেলার নেয়ার পর সাধারণত ইফতার পর্যন্ত আর ইনহেলার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। তাই এভাবে ইনহেলার ব্যবহার করে রোজা রাখতে হবে। তবে কারও অবস্থা যদি এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, ইনহেলার নেওয়া ছাড়া ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে শরিয়তে এ সুযোগ রয়েছে যে, তারা প্রয়োজনভেদে ইনহেলার ব্যবহার করবে এবং পরবর্তী সময় রোজা কাজা করে নেবে। আর কাজা করা সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে। আর যদি ইনহেলারের বিকল্প কোনো ইনজেকশন থাকে, তাহলে তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করবে। কেননা রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, পৃ. ৩২৫)