ইবরাহিম আ. যেভাবে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা (সম্প্রদায়) বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছ, নাকি কৌতুক করছ? তিনি বললেন, বরং তোমাদের প্রতিপালক তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক, যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন এবং এই বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী। আল্লাহর শপথ, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলো সম্পর্কে কৌশল অবলম্বন করব। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৫৫-৫৭)

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বিশ্বজগতের স্রষ্টার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। মূর্তিপূজা সম্পর্কে ইবরাহিম (আ.)-এর অদ্ভুত জিজ্ঞাসায় তাঁর সম্প্রদায় বিস্মিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যে তুমি কি সত্য কিছু নিয়ে এসেছ, নাকি ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছ? তখন ইবরাহিম (আ.) উপাসনার একমাত্র উপযুক্ত স্রষ্টার পরিচয় তুলে ধরে বলেন, সবার প্রতিপালক তিনিই, যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবীসহ সব কিছু অস্তিত্বহীন থেকে সৃষ্টি করেছেন।

তিনি এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি; বরং তিনি নিজেকে অন্যতম সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ মৌখিকভাবে আল্লাহর তাওহিদ বা এককত্বে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মূলত নবী-রাসুলদের বিধি-বিধানে শাখাগত ভিন্নতা থাকলেও সবার মূল লক্ষ্য ছিল এক ও অভিন্ন। তাই সব নবী-রাসুল তাওহিদ তথা একমাত্র আল্লাহকে অনুসরণের আহবান জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি সব জাতির মধ্যে এই মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে, এরপর আল্লাহ তাদের অনেককে সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তাদের অনেকের ওপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছে, অতএব পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে?’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)

ইবরাহিম (আ.) দীর্ঘ সময় মহান স্রষ্টার সন্ধানে পার করেন। এরপর তিনি সবাইকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের আহবান জানান। ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবে আমি ইবরাহিমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালন ব্যবস্থা দেখাই, যেন তিনি নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হন। অতঃপর যখন রাতের অন্ধকার তাঁকে আচ্ছন্ন করল তখন তিনি নক্ষত্র দেখে বললেন, তা আমার প্রতিপালক, অতঃপর তা অস্তমিত হলে তিনি বলেন, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।

অতঃপর চন্দ্রকে উজ্জ্বলভাবে উদিত হতে দেখে তিনি বললেন, তা আমার প্রতিপালক, তা অস্তমিত হয়ে গেলে তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ না দেখালে আমি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর তিনি সূর্যকে দীপ্তিমানভাবে উদিত দেখে বললেন, তা আমার প্রতিপালক, তা সবচেয়ে বড়, তা অস্তমিত হওয়ার পর তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের শিরক থেকে আমি মুক্ত। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৭৫-৭৯)

পবিত্র কোরআনে স্রষ্টার সন্ধানে ইবরাহিম (আ.)-এর দৃঢ়তার প্রশংসা করা হয়েছে। তাই সব বিশ্বাসীকে তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে এবং এর প্রত্যাখ্যানকারীদের নির্বোধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ছাড়া ইবরাহিমের ধর্মাদর্শ থেকে আর কে বিমুখ হবে! পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি, আখিরাতে সে অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর প্রতিপালক যখন তাঁকে বলেছিল, আত্মসমর্পণ করো, তিনি বলেছিলেন জগত্গুলোর প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩০-১৩১) সূত্র: ইকনা

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যৌথ পরিবারে কোরবানি করবেন যেভাবে

নূর নিউজ

২০২৩ সালে যেসকল আলেমদের হারালো বাংলাদেশ

নূর নিউজ

কুরআন হিফজ করা সবার কপালে জুটে না: মুফতি দেলোয়ার হোসাইন

নূর নিউজ