ইমরান উৎখাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস, বেরিয়ে এলো মদদদাতা রাষ্ট্রের নাম

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মদদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান সরকারের একটি গোপন নথির বরাতে এ তথ্য ফাঁস করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরু হলে নিরপেক্ষ অবস্থান নেন ইমরান খান। এতে ক্ষুব্ধ হয় ওয়াশিংটন। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক হয়।

২০২২ সালের ৭ মার্চের ওই বৈঠকে পাকিস্তান সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা হয় ইমরানকে যেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ইমরানকে ক্ষমুতাচ্যুত করলে পাকিস্তানের সঙ্গে আরও উষ্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। আর যদি তাকে ক্ষমতাচ্যুত না করা হয় তাহলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের দূত সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সেই বৈঠক নিয়ে গত দেড় বছর ধরে পাকিস্তানে— বিভিন্ন বিতর্ক, চিন্তা ও জল্পনা-কল্পনা দেখা গেছে। কারণ এরপর থেকেই সেনাবাহিনী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইমরানের দূরত্ব ও বৈরিতা বাড়তে থাকে।

ইমরানের রাজনৈতিক সংগ্রাম আরও বেড়েছে যখন এ বছরের ৫ আগস্ট তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পরবর্তীতে পাঁচ বছর রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের বৈঠকের এক মাস পরই অনাস্থা ভোট ক্ষমতা হারান ইমরান। ধারণা করা হয়, ওই ভোটাভুটিতে সমর্থন জানিয়েছিল দেশটির সেনাবাহিনী।

ইমরান খান অবশ্য গত বছরের মার্চ মাসেই ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে নিজ সমর্থকদের অবহিত করেছিলেন। ওই সময় তার মিত্ররাও তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, বিদেশিরা হুমকি দিয়েছে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে না হয় পাকিস্তান এর পরিণতি ভোগ করবে। এমনকি ২৭ মার্চ একটি জনসভায় এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও সবাইকে দেখিয়েছিলেন তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর একটি অংশ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তাদের এ নথিটি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ খান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কাছে বলেছিলেন ইমরান খান নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র খুশি হতে পারেনি। ওই সময় পাক দূত বলেছিলেন, তার আশা এ বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, সম্পর্ক ইতোমধ্যে কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু নেতৃবৃন্দে পরিবর্তন আসলে সেটি আবার ঠিক হবে।

এ বৈঠকের পরের দিনই ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট উত্থাপন করে তার বিরোধী রাজনীতিবিদরা। পরবর্তীতে নানান নাটকীয়তা শেষে তিনি এপ্রিলে ক্ষমতা হারান।

তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বছরের সাজা হওয়ায় পাকিস্তানের নির্বাচন আইন ২১৭-এর ১৬৭ ধারার অধীনে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। ফলে নির্বাচন আইন ২০১৭-এর ২৩২ ধারার সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩ (১) (এইচ) ধারার অধীনেও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়েছেন ইমরান।

সেইসঙ্গে দেশটির পার্লামেন্টের-৪৫ কুররাম-১ আসনের নির্বাচিত এমপি পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের আবেদনে সই করেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এর মধ্যে দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে দেশটির নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেল।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকা প্রকাশ, নেই বাংলাদেশী কেউ

নূর নিউজ

জাপানে একদিনে ১৫৫ ভূমিকম্প, নিহত ১৩

নূর নিউজ

অসহায় আত্মসমর্পণের পথে ইউক্রেন সৈন্যরা, দাবি রাশিয়ার

নূর নিউজ