বিশেষ প্রতিবেদক, নূর নিউজ
দেশের কওমি শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে যে ক’জন মানুষ নিবেদিত ছিলেন তার অন্যতম বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী।
তার কর্মকালেই কওমি মাদ্রাসার ইতিহাসের বৈপ্লবিক অধ্যায় তথা কওমি সনদের স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছিল। দেশের হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
জন্ম ও বেড়ে উঠা: ১৯৫০ সালের পহেলা ডিসেম্বরে সিলেটের মৌলভীবাজার শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই আলেম। মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদ্রাসায় ১৯৬৬ সনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৬৭ সনে ঢাকার প্রাচীনতম মাদ্রাসা আশরাফুল উলুম বড় কাটারায় এক বছর লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হন লালবাগ মাদ্রাসায়। সর্বশেষ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ এবং ৭২ শিক্ষাবর্ষে সিলেটের সুপ্রসিদ্ধ বরুনা মাদ্রাসায় মেশকাত ও দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন: ছাত্রজীবনে যেমনিভাবে তিনি সহপাঠী ও শিক্ষকদের আপনজন ছিলেন তেমনি ভাবে তিনি তার কর্মজীবনেও সকলের ভালোবাসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনার মউ মাদ্রাসায় হাদিসের দরস প্রদানের মাধ্যমে তার অধ্যাপনা জীবন শুরু হয়।
এরপর ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলভীবাজার ডিগ্রি কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। কৃতিত্বের সাথে সেখানে তিন বছর অধ্যাপনা শেষে আবারো ফিরে আসেন কওমি মাদ্রাসায়। সিলেটের দারুসসালাম মাদ্রাসায় হাদিসের পাঠদান শুরু করেন তিনি। তার কর্মজীবন ছিল বর্ণনীয়। এই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন তিনি। এছাড়াও বেশ কিছুদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন এই আলেম।
সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে বেফাকের সহকারী মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এভাবেই তার বেফাক নিয়ন্ত্রণের যাত্রা শুরু হয়। কওমি স্বীকৃতি ঠিক এক বছর পূর্বে তথা ২০১৬ সালের ২২ শে নভেম্বর থেকে বেফাকের মহাপরিচালক হিসেবে তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অবশ্য দায়িত্ব নেয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বেফাকের কাউন্সিলে মহাপরিচালক হিসেবে তাকে পূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত বেফাকের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে এসে হঠাৎ রাজনীতির সঙ্গে আরো গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার মনোবাসনা থেকে তিনি খেলাফত মজলিস নামক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের আমির নির্বাচিত হন। অবশ্য এর আগেও তিনি রাজনৈতিক মাঠে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন।
কর্মময় জীবনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছিলেন। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত করতে যে কজন আলেম পরিশ্রম করে গেছেন তাদের একজন ছিলেন মাওলানা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।
কর্মময় জীবন শেষে ২০২৩ সালে ৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর পূর্বে তিনি নারায়ণগঞ্জে খেলাফত মজলিসের একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন। বক্তব্য শেষ করে আযানের পর ইফতারি শুরু করতেই পরম বন্ধু মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তার সান্নিধ্য লাভের আশায় ইহজগত ত্যাগ করেন।