বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার অন্তর্গত আলমপুর গ্রামে কাজি সালেহ আহমদের বাড়ির কাজি আব্দুল আজিজের ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা
১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদরাসার ফোরকানিয়া মক্তব বিভাগের শিক্ষক কারী নুরুল হক আলমপুরীর কাছে মাদ্রাসা নেসাবের প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। অত:পর ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা অব্যাহত রেখে হাটহাজারী মাদরাসা থেকেই ১৯৭৩ খ্রীস্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
১৯৭৩ খ্রীস্টাব্দে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর হাটহাজারীর অন্তর্গত গড়দুয়ারা মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। গড়দুয়ারা মাদরাসায় ৯ বছর শিক্ষকতার পরে ৩ বছর মাদার্শা মাদরাসা, অত:পর হাজী ইউনুস সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠিত ঈছাপুর ফয়জিয়া তাজবিদুল কুরআন মাদরাসায় ৬ বছর শিক্ষকতা করেন। পরে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এবং উস্তাযুল হাদীস আল্লামা কাসেম ফতেহপুরী (রাহ.)এর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৯১ সালে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষকতা জীবনের শুরু থেকে আমৃত্যু তার মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা দিয়ে উর্দুখানা থেকে দাওরায়ে হাদীস ও তাফসির জামাত পর্যন্ত মানতেক, উলূমে হাদীস, উলূমে ফিক্বহ, উলূমে তাফসীর, উলূমে ফারায়েযসহ পর্যায়ক্রমে প্রায় সকল কিতাবের অধ্যাপনা করেছেন। তবে উলূমে তাফসীর, উলূমে হাদীস, উলূমে মানতেক, ও উলূমে ফারায়েযের উপর আল্লামা ইয়াহইয়ার দক্ষতা সর্বজন বিদিত।
হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন
দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে মুফতিয়ে আযম আল্লামা আব্দুচ্ছালাম চাটগামীর নিয়োগের সিদ্ধান্তের কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর ইন্তিকালের পর মজলিসে শূরার একই বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০২১ইং সালের ৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে আল্লামা মুহাম্মাদ ইয়াহিয়া (রহ.) কে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই থেকে ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব অত্যন্ত সুনামের সাথে পালন করেছেন।
দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদে নিযুক্তির আগে থেকে আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (রহ.) দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রশাসনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি কয়েক যুগ ধরে দারুল উলূম হাটহাজারীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মুখ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় তিনি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জামিয়ার প্রশাসনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রায়ই তাঁর কাছ থেকেও মতামত নিতেন। জামিয়া পরিচালনায় প্রশাসনকি উদ্ভুত কোন সমস্যার মুখে পড়লে শায়খুল ইসলাম (রহ.) প্রায়ই তা সমাধার ভার আল্লামা ইয়াহইয়া (দা.বা.)এর উপর অর্পণ করতেন।
এছাড়াও এর আগে কযেক যুগ ধরে তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার হিসাব বিভাগ পরিচালনা ও উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।
পাশাপাশি আল্লামা ইয়াহইয়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম’সহ দেশের বিভিন্ন প্রন্তের অসংখ্য কওমি মাদ্রাসার শূরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর, কওমি মাদরাসার কেন্দ্রিয় বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ (বেফাক)এর সহসভাপতি, খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়া বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বদানেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল সর্বজন বিদিত। এক কথায় তিনি যেমন সাধাসিধে, অমায়িক ও অনেক বিনয়ী এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন, তেমনি তিনি বহুবিধ যোগ্যতা ও গুণের অধিকারী ছিলেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও বহু গুণের অধিকারী আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ২০২৩ সালের ৩ জুন শুক্রবারে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।