নূর নিউজ: চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমনির কথিত মা নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
আটকের পর চয়নিকা চৌধুরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তার আটকের বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু পরীমনির সঙ্গে তাকে প্রায়ই দেখা গেছে, সেজন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে এসেছি। তবে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা পরীমনি ও নজরুল ইসলাম রাজের মুখোমুখি করা হবে চয়নিকা চৌধুরীকে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি বেসরকারি টেলিভিশন কার্যালয় থেকে ফিরছিলেন চয়নিকা চৌধুরী।পান্থপথে তার গাড়ি আটকায় ডিবি পুলিশ। তারা জানায়, জিজ্ঞাবাসাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডার পর এক পর্যায়ে তিনি নিজের গাড়িতে নারী পুলিশ সদস্যকে ওঠার অনুমতি দেন। পরে ওই গাড়িতে ডিবির আরও কয়েকজন উঠে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান।
এ সময় সেখানে উপস্থিত কয়েকজন টিভি সাংবাদিককে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘আমার তো এখন কিছু করার নেই। আমাকে কোথায় নিচ্ছে আমি জানি না। আপনারা দেখেন, কোনো অভিযোগ নেই, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।’
গত বুধবার রাতে রাজধানীর বারিধারা বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন পরীমনি। এর পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন চয়নিকা চৌধুরী। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, পরীমনির সঙ্গে শুধুই কাজের সম্পর্ক তার। আর কোনো সম্পর্ক নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো প্রয়োজনে ডাকলে তিনি যাবেন।
গত জুন মাসে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের ঘটনার সময় পাশে ছিলেন চয়নিকা। তাকে পরীমনি ‘মম’ (মা) বলে সম্বোধন করেন। চয়নিকাও বলেন, ‘পরীমনি ছোটবেলায় মা হারিয়েছে। ও আমাকে মম বলে ডাকে। আমিও ওকে মেয়ের মতো স্নেহ করি।’
বুধবার বিপুল পরিমাণ মদ ও ভয়ংকর মাদক এলএসডি ও আইসসহ গ্রেপ্তার হন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনি। এরপর রাতে গ্রেপ্তার হন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরীমনির বন্ধু নজরুল ইসলাম রাজ। তখন থেকে চয়নিকাকেও নজরদারিতে রাখা হয়। এছাড়া পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকেও আটক করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, পরীমনি ও নজরুল ইসলাম আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে পরীমনির নানা অপরাধের সঙ্গে এই দুজন ওৎপ্রোতভাবে জড়িত।
গত জুনের শুরুতে বোট ক্লাব কাণ্ডে আলোচনায় আসেন পরীমনি। সেদিনের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ঢাকাই ছবির এই নায়িকা। সেদিন পুরোটা সময় তার পাশে ছিলেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির অন্যতম সহযোগী ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ অন্য যারা অবৈধ কাজ ব্যবসায় জড়িত তাদের শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।
হারুন বলেন, পরীমনি যেসব অবৈধ কাজ ও ব্যবসা করতো, সেগুলো কাদেরকে নিয়ে করতো, কাদের সহযোগিতায় করতো, কারা তার নেপথ্যে রয়েছে, আমরা তাদের নাম পেয়েছি। তার বক্তব্য নোট করছি। যারাই তার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরই গ্রেপ্তার করা হবে।
পরীমনির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পরীমনি একজন চিত্রনায়িকা। তিনি এর আড়ালে যে খারাপ ব্যবসাগুলো করতেন এবং এ ব্যবসাগুলোতে কারা তাকে পেট্রোনাইজ করেছেন, এ কথাগুলো তিনিও স্বীকার করেছেন। আমরাও নজরদারি করছি। ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণির সঙ্গে জিমি নামের এক তরুণ গিয়েছিলেন। তার বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সবাইকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব।’