শিরক অর্থ হচ্ছে- অংশীদার, মিশ্রণ, সংমিশ্রণ, একটি বস্তুর মালিকানায় দু’জনার অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়- কোনো জিনিসকে আল্লাহর সত্তা, গুণ অথবা কোনো কর্মের সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করাকে শিরক বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়- আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করাকে শিরক বলা হয়। আর মুশরিক অর্থ- যে আল্লাহর ক্ষমতায় অন্য কারো অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করল।
শিরকের শাস্তি
আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘যখন লোকমান উপদেশস্বরূপ তার ছেলেকে বলল- হে ছেলে! আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরিক করা মহা অন্যায়।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৩)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ৭টি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। তারা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা।’ জাদু করা, কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের মাল খাওয়া, জিহাদ থেকে পলায়ন করা, সতি নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া।’ (বুখারি)
শিরকের বিবরণ
মানুষ বিভিন্ন কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে ফেলে এমন কিছু কাজ ও কথার বিবরণ তুলে ধরা হলো এখানে-
>> আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের যোগ্য মনে করে করা।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না; তিনিই একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো (সূরা নাহল, আয়াত-৫১)। অপর আয়াতে বলা হয়েছে- আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। অতঃএব আমারই ইবাদাত করুন। (সূরা ত্বহা, আয়াত-১৪)।
>> মানুষকে দেখানোর জন্য কোনও ইবাদত করা। যেমন- রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত বন্দেগি করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি তোমাদের ওপর শিরকে আসগর বা ছোট শিরকের ব্যাপারে অত্যন্ত ভয় করছি। প্রশ্ন করা হলো তা কী? তিনি বললেন, তা রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করা। (সহিহ আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস-৩২)।
>> কোনও বুজুর্গ বা পীর সম্পর্কে এমন বিশ্বাস ও ধারণা রাখা যে তিনি সবসময় আমাদের অবস্থা সম্পর্কে জানেন।
>>জোতির্বিদ, গণক, ঠাকুরদের কাছে অদৃষ্টের কথা জিগেস করা।
>>আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বা কিছুর নামে শপথ করা।
হজরত সাঈদ ইবনে আবু উবাইদাহ রহ: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনলেন, ‘না! এ কাবার শপথ।’ তখন ইবনে উমার রা: তাকে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করল, সে শিরক করল (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৩২৫১)।
>>কোনও পীর-বুজুর্গকে দূরদেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে, তিনি তা শুনতে পেয়েছেন।
>> কোনও পীর বুজুর্গ, জিন-পরী বা ভূতকে লাভ-লোকসানের মালিক মনে করা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৫৫)।
অপর আয়াতে বলা হয়েছে- তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৮৫)। নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য মহান আল্লাহরই। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান (সূরা মায়িদাহ, আয়াত-১২০)।
>> কোনও পীর বুজুর্গের কবরের কাছে গিয়ে সন্তান চাওয়া।
>> পীর বুজুর্গের কবরকে সিজদা করা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকো না। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে (সূরা কাসাস, আয়াত ৮৮)।
অন্যত্র ইরশাদ করেন- এই যে মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না (সূরা জিন, আয়াত-১৮)।
>>কোনও পীর বুজুর্গের নামে শিরনি, সদকা বা মানত করা।
>> আল্লাহর আদেশ ছেড়ে অন্য কারো আদেশ বা সামাজিক প্রথা পালন করা।
>> মহররমের তাজিয়া মিছিল করা।
>> কোনও সময়, মুহূর্ত, দিন বা মাসকে অশুভ মনে করা।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা ‘শিরক’, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দেবেন (সুনানে আবু দাউদ-৩৯১০)।
হজরত আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, অশুভ লক্ষণ (বিশ্বাস করা) শিরকি কাজ। রাবি বলেন, আমাদের মধ্যে অশুভ লক্ষণের ধারণা আসে। তবে আল্লাহর ওপর ভরসার দ্বারা তা দূরীভূত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৫৩৮)।
>> কোনও ব্যক্তিকে সম্বোধন করে এভাবে বলা যে, উপরে খোদা নিচে আপনি।
>>কারও নামে কসম করা বা জিকির করা।
>> কোনও বুজুর্গের ছবিকে সম্মান করা বা কারো মূর্তি রাখা। (গুনাহের বিবরণ ও মুক্তির পথ, ৪-৫)