সময়মতো নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে থাক না কেন তাকে নামাজ পড়তেই হয়। নামাজের প্রতি অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। যারা ঠিকমতো নামাজ আদায় করবে না, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সাকার ও গাই নামক জাহান্নামে শাস্তি দেবেন।
পবিত্র কোরআনে এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে—
فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا
‘নবী ও হেদায়েতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা ‘গাই’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।’ (সূরা মারইয়াম : আয়াত : ৫৯)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে—
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ حَتَّى أَتَانَا الْيَقِينُ
‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদের খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে (কেয়ামত) অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৭)
এজন্য প্রত্যেককে সময়মতো নামাজ আদায় করতে হবে। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হয়। ফজরে দুই রাকাত, জোহর, আসর ও এশায় রাকাত, ও মাগরিবে তিন রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়।
তবে কেউ যদি মুসাফির হন তাহলে তার জন্য এই বিধানে কিছুটা সহজতা আরোপ করা হয়েছে। মুসাফিরের জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজগুলো দুই রাকাত করে পড়ার বিধান দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, যিনি নিজ এলাকা থেকে ৪৮ মাইল দূরে যাওয়ার নিয়ত করবেন তিনি জোহর, আসর ও এশার নামাজ দুই রাকাত করে পড়বেন। আবার ৪৮ মাইল পরিমাণ দূরত্ব থেকে নিজ এলাকায় ফিরে এলে এই নামাজগুলো পুরো চার রাকাত করেই পড়বেন।
কোনো ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় কোনো নামাজ কসর করেন এবং সেই নামাজের ওয়াক্ত থাকার মধ্যেই নিজ এলাকায় ফিরে আসেন তাহলে তাকে নতুন করে সেই নামাজ চার রাকাত পড়তে হবে কি না— এনিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগে। যেমন একজন জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছেন—
আমি ঢাকায় পড়াশুনা করি। আমার বাড়ী নেত্রকোনায়। একবার ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় নেত্রকোনা সদরে পৌঁছে জোহর নামাজ আদায় করি। মুসাফির হওয়ার কারণে কসর করি। বাড়িতে পৌঁছে দেখি, তখনো জোহর নামাজের ওয়াক্ত বাকি আছে। আমি জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে মুকীম হওয়ার পর কি জোহর নামাজ পুনরায় চার রাকাত পড়তে হবে।
এ বিষয়ে ফকীহ আলেমদের মতামত হলো— মুসাফির অবস্থায় কসর করার পর সেই নামাজের সময় থাকা অবস্থায় নিজ বাড়িতে ফিরে এলেও সেই নামাজ পুরো পড়তে হবে না।
কেননা মুসাফির অবস্থায় কোনো নামাজ কসর আদায় করার পর ওই ওয়াক্তের মধ্যেই মুকীম হয়ে গেলেও তা পুনরায় পড়ার বিধান নেই।