কাজা রোজা আদায়ে দেরি করলে যে ক্ষতি

ঈমানের পর নামাজ এবং রোজা সাধারণভাবে সব মুসলমানের উপর ফরজ। বাকি দুটি ইবাদত (হজ, জাকাত আদায়) নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য, নির্দিষ্ট উপায়ে ফরজ করা হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক, ‍সুস্থ মস্তিস্ক, সক্ষম প্রত্যেক মুসলিমের উপর দিনে পাঁচবার নামাজ আদায় ও রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ।

নামাজ, রোজা এবং অন্যান্য ইবাদতের বিধানের পাশাপাশি অক্ষমতা, অপারগতায় প্রতিবিধানও দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। রোজার মাসে মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী নারী নিজের বা বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে রমজানে রোজা না রেখে পরে তা কাজা করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ ‘সিয়াম বা রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আর যাদের রোজা পালনের সক্ষমতা নেই, তারা এর পরিবর্তে ফিদিয়া, (প্রতি রোজার জন্য) একজন মিসকিনকে (এক দিনের নিজের) খাবার দেবে। যে ব্যক্তি অধিক দান করবে, তবে তা তার জন্য অতি উত্তম। আর যদি তোমরা পুনরায় রোজা পালন করো, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।’

শরীয়ত নির্ধারিত কোনও কারণে রমজানের রোজা কাজা হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তা পালন করে নেওয়া উচিত। কারণ, বিলম্ব করলে পরবর্তীতে হয়তো আর কখনো তা আদায় করা সম্ভব হবে না। ক্ষণস্থায়ী জীবনে আকস্মিকভাবে মৃত্যু এসে কখন সব শেষ করে দেয় তা বলা যায় না। তাই কাজা ইবাদত পালনে বিলম্ব করা মুমিনের জন্য কোনওভাবে উচিত নয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয় তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’ (সুরা ইউনুস: ৪৯)

মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত, তার ওপর এমন কিছু খারাপ অবস্থা আসবে, যা নেক আমল এবং কাজা পালনের প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সবকিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্যে অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না, কেয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কেয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত?’ (জামে তিরমিজি: ২৩০৬)

উল্লেখিত হাদিসে যে সাতটি বিষয়কে নেক আমলের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো— ১) দারিদ্র্য ২) ঐশ্বর্য ৩) অসুস্থতা ৪) বার্ধক্য ৫) মৃত্যু ৬) দাজ্জালের ফেতনা ৭) কেয়ামত।

এর অর্থ হলো—উল্লেখিত বিষয়গুলো নেক আমলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। তাই নবীজি (স.) আগামীকালের অপেক্ষা না করে দ্রুত নেক আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মৃত্যু উপস্থিত হলে তো আক্ষেপ আর অনুশোচনা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা থাকবে না। এ আক্ষেপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আজকের আমল এবং কাঁধে থাকা আমল আজকেই করতে হবে।

সময় হলে কাজ ইবাদতে মনোযোগী হবো বা সময়টা একটু পরিবর্তন হোক তারপরে আমল শুরু করবো—এমন চিন্তাভাবনা মূলত শয়তানের ধোঁকা। এ ধোঁকায় যারা পড়ে, তাদের আর নেক কাজের সুযোগ হয়ে ওঠে না। মহানবী (স.) সেজন্যই বলেছেন, ‘আদমসন্তানের যদি দুই উপত্যকাভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে তৃতীয় আরেকটি তালাশ করবে। আদমসন্তানের পেট তো (কবরের) মাটি ছাড়া আর কিছুই ভরিয়ে দিতে পারবে না!’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৩৬)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

তাকওয়া অর্জন করবেন যেভাবে

নূর নিউজ

সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্তে ঘুম ভাঙলে ফজর নামাজ পড়ার নিয়ম

নূর নিউজ

হজ সফল হওয়ায় ওমরার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে সৌদি

আনসারুল হক