আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের প্রায় আড়াই বছর পর নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করল ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিষয়ক যুগ্ম সচিব জেপি সিংসহ কূটনীতিকদের একটি দল কাবুলে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করেছে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহ তিনেক আগেই তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছিল চীন।
কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আফগানিস্তানকে বেইজিংয়ের ‘কবলে’ পড়া আটকাতেই নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ। কিছুদিন আগেই আফগানিস্তানকে ৫০ হাজার টন গম, ওষুধ, করোনার টিকা এবং অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল ভারত।
তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ট্রানজিট রুটের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, দুর্নীতি মোকাবেলা এবং আইএস (খোরাসান) জঙ্গি দমনের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও বৈঠক সম্পর্কে এক্সে পোস্ট করেছেন। এ ছাড়া বৈঠকের পর এক্সে প্রকাশিত আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে আগ্রহী এবং চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বিকাশ করতে চায়।
আফগান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখির বিবৃতিতে বলেছেন, মুত্তাকি এই বৈঠকে বলেছেন, তিনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চান। পাশাপাশি আফগানিস্তানের নাগরিকদের জন্য ব্যাবসায়িক ভিসা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি সুবিধা প্রদান করুক চান।
দেশের শত্রু যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্তির লড়াইয়ের মাধ্যমে আড়াই বছর আগে ক্ষমতা দখল করলেও এখনো জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়নি আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই তাদের স্বীকৃত কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক কূটনৈতিভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে বলে জানায় আনন্দ বাজার।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতকামী দল তালেবান আফগানিস্তানের সরকারে বসে। তার প্রায় ১০ মাস পর কাবুলে পা রেখেছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।