কিউবায় গুপ্তচর ঘাঁটি তৈরি করতে চলেছে চীন। এ লক্ষ্যে কিউবার সাথে একটি গোপন চুক্তিতেও পৌঁছেছে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি। যেখানে এই ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দূরত্ব মোটামুটি ১০০ মাইল।
মার্কিন মিডিয়া রিপোর্টের বরাত দিয়ে শুক্রবার (৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) দূরে অবস্থিত দ্বীপে ইলেকট্রনিক ইভসড্রপিং স্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য চীন কিউবার সাথে একটি গোপন চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবান সরকার এই প্রতিবেদন সম্পর্কে দৃঢ় সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
গোপন গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এই প্রতিবেদন সামনে এনেছে। কিউবার সাথে চীনের গোপন চুক্তির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য জানেন এমন মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই ধরনের গুপ্তচর স্থাপনা তৈরি করা গেলে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা চীনের হাতে চলে যাবে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় বহু মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। একইসঙ্গে কিউবার আশপাশের এলাকায় জাহাজের চলাচলও পর্যবেক্ষণ করতে পারবে বেইজিং। মূলত মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদর দপ্তর টাম্পায় অবস্থিত। এছাড়া অতীতে ফোর্ট ব্র্যাগ নামে পরিচিত বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ফোর্ট লিবার্টিও উত্তর ক্যারোলিনায় অবস্থিত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুপ্তচর ঘাঁটি তৈরি করতে চীন ও কিউবা নীতিগতভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে মার্কিন ওই কর্মকর্তারা বলেছেন। আর ইলেকট্রনিক ইভসড্রপিং তৈরির অনুমতি পেতে কিউবাকে ‘কয়েক বিলিয়ন ডলার’ দিতে হবে চীনকে।
অবশ্য হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা এই রিপোর্টটি দেখেছি। এটা সঠিক নয়।’
তবে এখানে কোন বিষয়টিকে তিনি সঠিক নয় বলে মনে করছেন তা উল্লেখ করেননি এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কিউবার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সত্যিকারের উদ্বেগ’ রয়েছে এবং ওয়াশিংটন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এছাড়া মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন: ‘চীন এবং কিউবার নতুন ধরনের গোয়েন্দা স্টেশন তৈরি করার বিষয়ে আমরা অবগত নই।’
অন্যদিকে কিউবার সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফার্নান্দেজ ডি কসিও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই রিপোর্টটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে জঘন্য এবং ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে এটিকে তিনি কিউবার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কয়েক দশকের পুরোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য মার্কিন বানোয়াট প্রতিবেদন বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে সব ধরনের বিদেশি সামরিক উপস্থিতিকে প্রত্যাখ্যান করে কিউবা।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন: ‘আমরা এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই এবং ফলস্বরূপ আমরা এখনই মন্তব্য করতে পারছি না।’
রয়টার্স বলছে, কমিউনিস্ট সরকার শাসিত যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে চুক্তি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে কার্যত শঙ্কা সৃষ্টি করেছে বলে প্রভাবশালী ওই মার্কিন পত্রিকাটি দাবি করেছে। এতে বলা হয়েছে, এই ধরনের চুক্তি আমেরিকার উপকূলের কাছাকাছি নতুন করে হুমকি সৃষ্টি করেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, যে গুপ্তচর ঘাঁটির কথা শোনা যাচ্ছে তার প্রস্তাবিত অবস্থান বা সেটির নির্মাণ শুরু হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় চীনা গুপ্তচর বেলুন ভূপাতিত করা নিয়ে বৈশ্বিক এই দুই পরাশক্তি দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান রয়েছে এবং তা প্রশমিত করার জন্য ওয়াশিংটন ও বেইজিং অস্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে রিপোর্ট আসার মধ্যেই এই চুক্তির খবরটি সামনে এলো।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীন সফর করার পরিকল্পনা করছেন এবং এই চুক্তি তার সেই সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যদিও গুপ্তচর বেলুনের সেই ঘটনায় ওয়াশিংটনের শীর্ষ এই কূটনীতিক এর আগে দেশটিতে সফর বাতিল করেছিলেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক তৎপরতা থেকে শুরু করে তাইওয়ানের কাছাকাছি নানাবিধ তৎপরতা, বেইজিংয়ের মানবাধিকার রেকর্ড এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র কিরবি বলেছেন, ‘কিউবার সাথে চীনের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের প্রকৃত উদ্বেগ রয়েছে এবং আমরা প্রথম দিন থেকেই আমাদের গোলার্ধে এবং বিশ্বজুড়ে চীনের কার্যকলাপ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন রয়েছি।’