ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা:
স্বজনহারাদের আহাজারি আর কান্নায় ভারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকাশ-বাতাস। স্বজনদের চোখের পানি আর তিতাস পাড়ের লাইসকা বিলের পানি যেন একাকার। বিষাদের উপছে পড়া ঢেউ যেন আঘাত হানছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে। আসছে একের পর এক লাশ। অবতারণা হচ্ছে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হয় পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানের হাফেজ ছেলের লাশ এলে। কেউ কি শুনতে পায় আখি বেগমের বুক ফাটা আর্তনাদ? কোরানের হাফেজ ছেলে লাশ দেখার পর তার আর্তনাদে অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি উপস্থিত কেউ। দশ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় এই নারী।
স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বিজয়নগরের চম্পকনগর গ্রাম থেকে নৌকায় করে ফিরছিলেন আখি। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় তার বাম হাতে এক বছর বয়সী মেয়ে মোবাশ্বিরা আর ডান হাতে ধরা ছিল ১০ বছর বয়সী ছেলে হাফেজ তানবীর হোসাইন। একপর্যায়ে হাত থেকে ছিটকে যায় বড় ছেলে। এরপর আর পাওয়া যায়নি তাকে। রাতেই হাসপাতালে পৌঁছায় কোরআনের এ খুদে হাফেজের নিথর দেহ। স্বামী মুরাদ মিয়াও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আহত অবস্থায়।
আখি বেগম জানান, প্রখর মেধাবী তানবীর। অল্প বয়সেই হিফজ করে ফেলেছিল কোরআন। তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার এক ছেলে আর এক মেয়েকে বাঁচাতে পারলেও ছেলেটাকে রক্ষা করতে পারলাম না। এ সময় ছেলেহারা মাকে সান্ত্বনা দেয়ার সাধ্য ছিল না কারো।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে বিজয়নগর উপজেলার তিতাস নদীর পাড়স্থ লইসকা বিলে একটি যাত্রীবোঝাই ট্রলারের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বালুবোঝাই বুলগেটের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।