গরু চোরাচালানের অভিযোগে অপহরণের পর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুই মুসলিমকে হত্যার দায়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুকে পবিত্র বলে মনে করেন এবং ভারতের অনেক রাজ্যে এই প্রাণী জবাই নিষিদ্ধ রয়েছে।
২০১৪ সালে ভারতের কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে গো-রক্ষকদের কার্যক্রম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই গো-রক্ষকরা দেশটির নানা প্রান্তে গরু পরিবহনের দায়ে মুসলিমদের পিটিয়ে ও আগুনে পুড়ে হত্যা করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানায় একটি পোড়া গাড়ি থেকে জুনায়েদ (৩৫) ও নাসির (২৭) নামে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একদিন আগে অর্থাৎ বুধবার নিখোঁজ হয়েছিলেন তারা।
এই দুই যুবক পার্শ্ববর্তী রাজস্থান প্রদেশের বাসিন্দা। নিখোঁজের পর তাদের পরিবারের সদস্যরা দেশটির উগ্র ডানপন্থী বজরং দলের পাঁচ সদস্যকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছিলেন।
হরিয়ানার পুলিশ কর্মকর্তা শ্যাম সিং ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা এখন পর্যন্ত এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি এবং বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এক বিবৃতিতে রাজস্থানের পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন ট্যাক্সি চালক এবং তিনি গো-রক্ষক দলের সাথে জড়িত।
দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান সন্দেহভাজন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূলহোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
হরিয়ানার ভরতপুর পুলিশের মহাপরিদর্শক গৌরব শ্রীবাস্তব বলেছেন, জুনায়েদের বিরুদ্ধে গরু চোরাচালানের মামলা হয়েছে। আর নাসিরের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, রাজস্থানের মন্ত্রী জাহিদা খান নিহতদের পরিবার পরিদর্শন করেছেন। নিহত দুজনের পরিবারকে ২০ লাখ ভারতীয় রুপি করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকার প্রত্যেক পরিবার থেকে একজনকে করে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করবে।
এদিকে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট টুইটারে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমালোচকরা নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনায় চোখ বন্ধ করে রাখার অভিযোগ করেছেন। ভারতের যে কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ এবং রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে পশু পরিবহনে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে, হরিয়ানা সেসব রাজ্যের একটি।