একজন মানুষ সুস্থ থাকার জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। না ঘুমিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। ঘুমিয়ে পড়ার পর অনেক সময় মানুষ স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখা একটি স্বাভাবিক বিষয়। ঘুমের ভেতর মানুষের স্বপ্ন দেখা নিয়ে এক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নেককার মুসলমান ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের সত্তর ভাগের একভাগ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২২৭, সহিহ বুখারি, ৬৯৮৯)
হজরত উম্মু কুরয আল-কাবিয়াহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবুওয়াতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে, কিন্তু মুবাশশিরাত (শুভ সংবাদ) অবশিষ্ট আছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২২৮, আহমাদ, হাদিস, ২৬৬০০, দারিমী, হাদিস, ২১৩৮)
স্বপ্ন ৩ ধরনের
অপর এক হাদিসে হজরত আওফ বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, স্বপ্ন তিন প্রকার। এক. শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতিজনক স্বপ্ন যার দ্বারা সে আদম সন্তানকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। দুই. মানুষ জাগ্রত অবস্থায় যা দেখলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় স্বপ্নে তা দেখে। তিন. স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। ( ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৩৯)
স্বপ্ন দেখার বিষয়ে হাদিসে আরেক হজরত উবাদাহ ইবনুস সামিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনে আয়াত- ‘তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে সুসংবাদ।’ ( সূরা ইউনুস, (১০), আয়াত,৬৪) সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ভালো স্বপ্ন যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে অথবা তাকে দেখানো হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৩০, তিরমিজি, হাদিস, ২২৭৫,আহমাদ, হাদিস, ২২১৭৯,২২২৩৪,২২২৬১,দারিমী, হাদিস, ২১৩৬)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শেষ যমানায় মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন কদাচিৎ অবাস্তব হবে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক সত্যবাদী তার স্বপ্নও অধিক সত্য হবে। মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৪৯, সহিহুল বুখারি, হাদিস, ৬৯৮৩, ৬৯৮৮, ৬৯৯০, ৭০১৭, মুসলিম, হাদিস, ২২৬৩, ২২৬৪, ২২৬৬, তিরমিজি, হাদিস, ২২৭০,২২৯১, আবু দাউদ, হাদিস, ৫০১৭, ৫০১৯, আহমাদ, হাদিস, ৭১২৮, ৭১৪৩)
স্বপ্ন সবার কাছে বলে বেড়ানো উচিত নয়
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। যতক্ষণ পর্যন্ত তা কারো কাছে ব্যক্ত করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। আর যখন কারো কাছে ব্যক্ত করে ফেলা হয় এবং শ্রোতা এর কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে দেয়, তখণ সে ব্যাখ্যা অনুযায়ী তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়ে যায়। কাজেই জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছাড়া অথবা অন্ততপক্ষে বন্ধু ও হিতাকাঙ্খী ছাড়া অন্য কারো কাছে স্বপ্নের বিষয় ব্যক্ত করো না।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৪৬, তিরমিজি, হাদিস,২২৭৮, ২২৭৯, আবু দাউদ, হাদিস, ৫০২০, আহমাদ, হাদিস, ১৫৭৪৯, ১৫৭৫৮, ১৫৭৬২, ১৫৭৭২, দারিমী, হাদিস, ২১৪৮)
শয়তানের পক্ষ থেকে স্বপ্ন
স্বপ্ন দেখা নিয়ে এক হাদিসে হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখে, আমিও গত রাতে তেমনি স্বপ্ন দেখলাম। আমার ঘাড়ে আঘাত করার ফলে আমার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেল। আমি সেটির অনুসরণ করে তা ধরে ফেললাম এবং পুনরায় ঘাড়ে স্থাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঘুমের মধ্যে তোমাদের কারো সাথে শয়তান খেলা করলে সে যেন তা লোকের কাছে না বলে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৪৪, মুসলিম, হাদিস, ২২৬৮, আহমদ, হাদিস, ১৩৯৭৪)
বানিয়ে স্বপ্ন বলার ক্ষতি
স্বপ্ন দেখলে তা বিজ্ঞ কোনো আলেম বা সৎ লোকের কাছে বলা উচিত। তবে স্বপ্ন না দেখে বানিয়ে বানিয়ে স্বপ্ন বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, যারা স্বপ্ন না দেখেই অন্যের সামনে মিথ্যা বলে পরকালে তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত। এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে তাকে দু’টি যবের দানার মধ্যে গিট লাগাতে বাধ্য করা হবে এবং এজন্য তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩২৪৮, তিরমিজি, হাদিস,২২৮৩, আবু দাউদ, হাদিস, ৫০২৪, আহমা , হাদিস, ২২১৪, ৩৩৭৩)