আবু তাহের, চাঁদপুর:
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক নারীর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এতে শোকাহত স্ত্রী ছুরি হাতে নিয়ে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সসহ অন্য রোগী-স্বজনদেরকে ১০-১৫ মিনিট ধরে ধাওয়া করে এক সময় নিজেই জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।
শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার আইসোলেশন ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
পরে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই শাহরিণ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। এর আগে করোনায় মারা যান তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন। তিনি চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রুপসা গ্রামের জালাল বাশারের ছেলে।
হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, করোনায় আক্রান্ত স্বামী দেলোয়ার হোসেনকে (৬৫) নিয়ে তিন-চার দিন ধরে স্ত্রী কুলসুম বেগম হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনো স্বজন খোঁজখবর না রাখায় ও তাকে হাসপাতালে দেখতে না আসায় তিনি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন।
কুলসুমের স্বামী দেলোয়ার হোসেন অক্সিজেন লেভেলও অনেকটা কম ছিল।
তারা আরো জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা ওয়ার্ডেই মারা যান দেলোয়ার। চোখের সামনে স্বামীর এমন মৃত্যুর দৃশ্য দেখে স্ত্রী মানসিকভাবে আঘাতে পেয়ে মানসিকভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ সময় তিনি একটি ছুরি নিয়ে ডাক্তার ও নার্সদের ধাওয়া করেন। একইসাথে হাসপাতালে থাকা অন্য রোগীর স্বজনদেরকেও ছুরি উঠিয়ে ভয় দেখান তিনি। তবে কেউ আহত হয়নি।
মৃত দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নে নজরুল ইসলাম জানান, তার মামা দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার শরীরে বিভিন্ন রোগ ধরা পড়ে। এসব রোগ থেকে সুস্থ হতে সেখানে চিকিৎসা করালেও তিনি কোনোভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তাই চিকিৎসার জন্য চার-পাঁচ বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন। চার দিন তার মামা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ঘটনার দিন ডা: নাভিয়া তাহসিন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও করোনা ফোকালপারসন ডা: সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, ওই রোগী গত দু’দিন আগে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার অক্সিজেন লেভেল ছিল ৬৫.১ ভাগ। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে যাওয়ায় শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আমরা শুনেছি তার স্ত্রী ফল কাটার ছুরি নিয়ে কয়েকজনকে ধাওয়া করেছেন। তবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।