মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের পর নতুন করে সারাদেশে মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত স্থানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার অন্যতম উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে চায় সরকার।
এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে অধিকাংশই সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠিত মোট এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। দেশের ৫০৫টি উপজেলায় মাদরাসাগুলো স্থাপন করা হয়। মাদরাসাভিত্তিক এই শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে ছয় হাজার ৬০ জনের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
সরকার স্বীকৃত সনদধারী আলিয়া ও কওমি মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেমদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এসব মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখাতে সরকার ৫০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ করবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলায় লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেবেন ডিসি ও ইউএনওরা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা বিভাগ) হাজেরা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, এবার সারাদেশে নতুন করে মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে। ফলে একদিকে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ছয় হাজার ৬০ জন শিক্ষিত ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান হবে।
প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ও দেশে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাবে। আরবি ভাষা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি ও মানবসম্পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে এটি অবদান রাখবে। প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সনদধারী আলিয়া ও কওমি মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেমদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। একইসঙ্গে দেশের সব উপজেলায় কোনো ধরনের অবকাঠামোগত ব্যয় ছাড়াই জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠিত মোট এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প মেয়াদে মোট আট লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হবে। এছাড়া এক লাখ ৪১ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থীকে ইবতেদায়ি উত্তীর্ণের সনদপত্র প্রদান করা হবে।
এসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রকল্প নিতে যাচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রস্তাবিত দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার মাধ্যমে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হবে।
প্রকল্পে দারুল আরকাম মাদরাসার সাধারণ শিক্ষকদের মাসিক সম্মানি ভাতা বাবদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষককে ১৩ হাজার টাকা দেওয়া হবে। অপরদিকে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় বিদ্যমান ইবতেদায়ি মাদরাসাসমূহে জুনিয়র শিক্ষকদের জন্য মাসিক দুই হাজার ৩০০ টাকা সম্মানি দেওয়া হবে। এছাড়াও ইবতেদায়ি প্রধানদের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা হারে সম্মানি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওইসব এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। শিশু, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, কর্মজীবী শিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী এবং অন্যদের শিক্ষার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।