চাল, ডাল, তেলের পর এবার অস্থির চিনির বাজার। গত দেড় মাস ধরে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। যা গত বছর একই সময় ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও আদার দাম বেড়েছে আরেক দফা। পাশাপাশি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনি ২.৭০ শতাংশ বাড়তি দরে বিক্রি হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। লিটারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ, পাম তেলের (সুপার) দাম বেড়েছে ৩.১১ শতাংশ। পাশাপাশি ৭ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ। আর ১৫.২২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে আদা।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ১ মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। ২ মাস আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর একই সময়ে এ চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা।
নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, প্রতি কেজি চিনি ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে তা কখনও চিন্তায়ও আসেনি। বাজারে অন্যান্য পণ্যের মতো চিনির দাম নিয়েও বিক্রেতারা কারসাজি করছে। রমজানে চিনির কদর বেশি থাকলেও সে সময়ও দাম কখনও ১০০ টাকায় ওঠেনি। এখন এই দামে বিক্রি হচ্ছে।
নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা তুহিন বলেন, পাইকারি বাজারে বিক্রেতারা চিনির সংকট বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে খুচরা বাজারে চিনির দাম বাড়তি। তবে মনে হচ্ছে, চিনি নিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনই দাম নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলী হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদা আছে ৩০ গাড়ি চিনির। কিন্তু আমাদের ১০ গাড়ি চিনি দেওয়া হচ্ছে। এতে পাইকারি বাজারে পণ্যটির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ায় পাইকারিতেও দাম বেড়েছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক ভাবে বাড়িয়েছেন কিনা তা দেখতে হবে। কারণ বিক্রেতাদের অতি মুনাফা করার প্রবণতা আছে। তারা সুযোগ পেলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে। চিনির দাম বাড়ার পেছনে এমন কিছু আছে কি না তা দেখতে হবে। পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য একাধিক পণ্যের দাম বেড়েছে। সে সব পণ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্টদের সজাগ ভূমিকা রাখতে হবে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে আদা ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রতিদিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অধিদপ্তরের প্রত্যেক সদস্য ভোক্তার স্বার্থে কাজ করছেন।