ছুটে যাওয়া নামাজ যেভাবে আদায় করবেন

ঈমানের পর একজন মুসলমানের জন্য সবচে বড় আবশ্যক বিষয় হল; সময়মতো নামাজ আদায় করা। এ সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদিস এসেছে। এবং সময়মতো নামাজ না পড়লে অনেক ধমক এসেছে।

তাই একজন মুমিনের কর্তব্য সময়মতো নামাজ আদায় করে নেওয়া। কাজা না করা। তা সত্ত্বেও যদি কোনভাবে নামাজ কাজ হয়ে যায় তাহলে তা অতি দ্রুত আদায় করে নিবে।

রোজা, হজ ইসলামের মৌলিক ইবাদত ও ঈমানের স্তম্ভ। সেগুলো ছুটে গেলে কাজা করা আবশ্যক। নামাজও ঈমানের স্তম্ভ এবং রোজা ও হজ থেকেও আরো বড় আমল। তাই নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা করা আরো বেশি আবশ্যক।

এটি ইসলামের নির্দেশ। অনেক হাদিসে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। সকল সাহাবা তাবেয়ীনের ফতওয়া ও নির্দেশনা এটাই। বরং সাহাবা তাবেয়ীন থেকে নিয়ে গোটা উম্মতের সর্বসম্মত বক্তব্যও তাই।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবূ সাঈদ খুদরী রা. বলেন, খন্দকের দিন আমরা নামাজ পড়তে পারিনি। এমনকি মাগরিবের পরও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেলাল রা.-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি ইকামত দিলেন। আল্লাহর রাসুল সুন্দর করে নামাজ পড়ালেন, যেমন সময়মত নামাজ পড়িয়ে থাকেন। এরপর বেলাল রা.-কে আদেশ করলেন (আসরের ইকামত দিতে) বেলাল রা. ইকামত দিলেন। তিনি আসরের নামাজ সুন্দর করে পড়ালেন, যেভাবে তিনি সময়মত পড়িয়ে থাকেন। অতঃপর মাগরিবের ইকামত দিতে আদেশ করলেন। বেলাল রা. ইকামত দিলেন। তিনি একইভাবে মাগরিব পড়ালেন।

(মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১৪৮৩ (সহিহ) আরো দেখুন; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৬২, সহিহ বুখারী, হাদিস: ৩৮৮৫)

রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়লে বা নামাজ থেকে উদাসীন হলে, যখন নামাজের কথা মনে পড়বে, তখন যেন সে নামাজ পড়ে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি আমার স্মরণে নামাজ আদায় কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬০১)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক নারী আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার মা মান্নত করেছেন হজ করার, কিন্তু তিনি হজ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করব? আল্লাহর রাসুল বললেন, হ্যাঁ তুমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় কর। তুমি বল তো, তোমার মায়ের উপর যদি মানুষের পাওনা থাকত, তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? তোমরা আল্লাহর পাওনা পরিশোধ কর। কেননা আল্লাহর পাওনা পরিশোধের বেশি উপযুক্ত। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৭৩১৫)

এ হাদিসে হজকে বান্দার পাওনার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দার পাওনা যেমন পরিশোধ করতে হয় তেমনি হজ না করে থাকলে তা আদায় করতে হবে। কেননা তা আল্লাহর পাওনা।

হজ যেমন বান্দার উপর আল্লাহর পাওনা তেমনি নামাজও বান্দার উপর আল্লাহর পাওনা। তাই নামায কাজা হয়ে গেলে তাও আদায় করতে হবে।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, অধিক কাজা নামায আদায়ে মনোযোগী হওয়া নফল পড়া থেকে উত্তম। (মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/১০৪)

উল্লেখ্য, ছুটে যাওয়া নামায কাজা করার আবশ্যকতার বিষয়ে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, চার ইমামসহ সকল ওলামায়ে উম্মত এক্ষেত্রে একমত।

পঞ্চম শতাব্দীর বিশিষ্ট আলেম আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন- ফরজ রোজার মত ফরজ নামাজও সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে কাজা করতে হয়। যদিও উম্মতের ইজমা ও ঐকমত্যই দলিল হিসেবে যথেষ্ট, যাদের অনুসরণ করা ও যাদের পথ থেকে বের না হওয়া ঐসব বিচ্ছিন্ন মতের প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল। তারপরও কিছু দলিল উল্লেখ করা হল; রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন…। (আল ইসতিযকার ১/৪৮)

তার কথায় স্পষ্ট যে, কুরআন হাদিসের দলিল ছাড়াও ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের আবশ্যকতার ক্ষেত্রে পুরো উম্মতের ইজমা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে ইজমা ছাড়া অন্য কোন দলিল যদি নাও থাকে তাহলেও ইজমাই যথেষ্ট। আর তিনি এ কাজা করাকে মুমিনদের পথ বলেছেন। যার উপর অবিচল থাকতে কুরআনে আদেশ করা হয়েছে। এবং তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

পক্ষান্তরে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও মুজতাহিদ ইমামগণসহ কোন এক ইমাম থেকে এমন ফতওয়া পাওয়া যাবে না যে, তিনি কাজা আদায় না করার ফতওয়া দিয়েছেন। সাথে সাথে তারা এক্ষেত্রে কোন একটি আয়াত বা হাদীসও উল্লেখ করতে পারবে না, যাতে বলা হয়েছে বা যা থেকে বোঝা যায় যে, কাজা লাগবে না।

তাহলে এবার চিন্তা করি, যে মতটির পক্ষে অনেক হাদিস আছে এবং সাহাবা, তাবেয়ীনসহ সকল ওলামায়ে কিরাম একমত এবং যে মতটি মুমিনদের মত সেটি সঠিক হবে না যার পক্ষে কোন একটি আয়াত বা হাদিসও নেই এবং কোন সাহাবী কিংবা কোন আহলে ইলমের ফতওয়াও নেই, সেটি সঠিক হবে?

এ জাতীয় আরো সংবাদ

অজুতে যেসব কাজ করা সুন্নত

নূর নিউজ

ওমরা পালন শুরু হয় যেভাবে

নূর নিউজ

নামাযে ক্রন্দন করা এবং চোখ বন্ধ করে নামায পড়ার বিধান কী?

নূর নিউজ