জাতিসত্তা নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগেই উইঘুরদের রক্ষা করতে হবে

উইঘুর মুসলিমদের রক্ষায় বিশ্ব নেতারা এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিশাল এ জনগোষ্ঠীটির জাতিসত্তা একসময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়নে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, যৌতুকসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা নিরসনে আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে।

বুধবার (৫ জুলাই) ফেনীর সালাম কমিউনিটি সেন্টারে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূলে আলেমদের করণীয় ও ২০০৯ সালের ৫ জুলাই চীনের উরুমকিতে উইঘুর মুসলিম গণহত্যার ১৪তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সচেতন আলেম সমাজ ফেনীর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রথিতযশা আলেম ও চট্টগ্রাম ওমর গণি এম ই এস ডিগ্রী কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন।

তিনি বলেন, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিবেচনার মারপ্যাঁচে উইঘুর মুসলিমদের ইতিহাস সংগ্রাম, নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। ফিলিস্তিনি, মুর, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে মানুষ জানলেও চীনাদের রক্ষণশীল ও নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবস্থার কারণে উইঘুরদের বাস্তব পরিস্থিতি ও সেখানকার বিভিন্ন ট্রাজেডি সম্পর্কিত তথ্য সাধারণ পর্যায়ে এখনো স্পষ্টভাবে পৌঁছায়নি।

২০০৯ সালের আজকের দিনে চীনের অন্যতম বৃহৎ প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে স্থানীয় উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নিষ্ঠুর দাঙ্গা চালায় বহিরাগত চীনা বংশোদ্ভূত হান সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের আক্রমনে সে সময় প্রায় ২০০ মুসলিম নিহত হয়। তখন থেকে সারা বিশ্বে উইঘুর মুসলমানদের উরুমকি দাঙ্গা ও গণহত্যার বার্ষিকী পালন করছে।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেন, চীন সরকার আনুমানিক ১.৫ মিলিয়ন লোককে আটক করে সংশোধনের নামে নির্যাতন নিপীড়ন করছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিম নিপিড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিমকে সোচ্চার হতে হবে। উরুমকিতে মুসলিম গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে চীন সরকারের বিচার করতে হবে।

ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, নিপীড়িত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের, বিশেষত মুসলমানদের ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। উইঘুর মুসলমানদের করুণ অবস্থা ফিলিস্তিনের মুসলিম জনগোষ্ঠীর দুর্দশার সাথে তুলনীয়। উভয় ভূখণ্ডের জনগণ ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের নিশ্চয়তাসহ মৌলিক মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার। চীন তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী উইঘুরদের প্রতি যেভাবে ধারাবাহিক নিবর্তন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

সভায় বক্তারা বলেন, চীন সরকার মিডিয়ার সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর লাখ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের মুক্তিকামী জনতা তাদের সহযোগিতা পায়নি। মিয়ানমারের সরকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন বন্ধে চায়নাদের পরোক্ষ যোগসাজশ রয়েছে।

 

চীনা সরকার মানবাধিকার কর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে চীনা সরকার এই সকল অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ মিত্ররা চীনের উপর নামেমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীনের দানব সরকার এই সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষ্যান্ত হয়নি এবং হবেও না। তাকে থামাতে হলে বিশ্বের সকল দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করিয়ে চীনের উপর ব্যাপক ভিত্তিক অবরোধ আরোপ করে চাপ তৈরি করতে হবে। অন্যথায় চীনা দানব সরকার কোনভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না। তারা অর্থনৈতিকভাবে ধনী দেশ হওয়ার কারণে সারা বিশ্বের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং মুসলিমদের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, যৌন নীপিড়ন ইত্যাদি অবলীলায় চালিয়ে গেলেও কেউ তাদের আটকাতে সাহস পায় না।

এ সময় বক্তারা জাতিসংঘের অধীনে এসব ঘটনা তদন্তের দাবি জানান। পাশাপাশি ওআইসি ও মুসলিম বিশ্বকে উইঘুরদের রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও আন্তর্জাতিক কেরাত সম্মেলন সংস্থা ফেনীর সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান।

বক্তব্য রাখেন- ফেনী প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ দফতর সম্পাদক নূরুল করীম আকরাম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের ফেনী জেলার সেক্রেটারি শাইখুল হাদিস মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলার সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল করীম, কুয়েত আল রাইল ন্যাশনাল ব্যাক মসজিদের খতিব শায়খ গোলাম সারোয়ার সিরাজী, লেমুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহেদ আলী হাজারী প্রমুখ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

নিউইয়র্কে পুলিশের বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ, হতে পারে কারাদণ্ড

নূর নিউজ

লিবিয়ায় নৌকাডুবি, ৩৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার

আনসারুল হক

কর্ণাটকের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি হিজাব পরা শিক্ষার্থীদের

নূর নিউজ