ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, দেশে জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার না থাকায় দেশের অবস্থা অত্যন্তÍ ভয়াবহ। নিশি রাতের সরকার হলে দেশে
সরকারকে আমলানির্ভর হতে হয়। আর আমলানির্ভর হলে দেশ ক্রমেই রসাতলে যায়। যা
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হচ্ছে। আজকে সরকার প্রশাসনের হাতে জিম্মি। এজন্য
অনেক এমপি আক্ষেপ করে বলছেন, থানার ওসি কথা শোনছেন না। আমলানির্ভর হওয়ার
কারণে জনগণের কোন অধিকারও নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও তা নিয়নন্ত্রণ
করা যায় না। ফলে কাচামরিচের কেজি ১২শ টাকায় গড়ায়। সরকার পুরো প্রশাসন ও
আমলানির্ভর হয়ে গেছে। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।
আজ ১০ জুলাই সোমবার বিকেলে নওগাঁ জেলার একটি মিলনায়তনে অথর্ব প্রধান
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল সংখ্যানুপাতিক
নির্বাচন (চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরনে সংসদ
ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের
দাবীতে অনুষ্ঠিত আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা
বলেন। জেলা সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে
জেলা, থানা ও সহযোগি সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও
সামাজিক ন্যায়বিচার আজ ভুলুন্ঠিত। বর্র্তমান সরকার ভোটের নামে প্রহসন
করে, ভোটকেন্দ্র দখল করে দিনের ভোট রাতে নিয়ে এবং ইভিএমের মাধ্যমে
ডিজিটাল কারচুপি করে গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে লজ্জিত করেছে। এতে
করে ক্ষমতাসীন সরকার জনবিচ্ছিন্ন একটি স্বৈর সরকারে পরিণত হয়েছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, বিদেশি শক্তিগুলো বিভিন্ন ছুতায়
বাংলাদেশকে নানারকম নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে
কেবলাত্র ক্ষমতাসীনদের বিদেশতোসণনীতির কারণে। এমতাবস্থায় সরকার ক্ষমতায়
থাকার সকল বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আজ চরম
হুমকির মুখে। অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন ঘনিভুত হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি,
দেশীয় ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং ডলার সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে আজ
পঙ্গু করে ফেলেছে। বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তির অশুভ প্রভাব; স্বাধীন
রাষ্ট্রের সম্মান ক্ষুন্ন করছে। তাই সরকারের পতন এখন সময়ের দাবি।
মুফতী ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে জাতীয় সরকারের রুপরেখার ৯ দফা প্রস্তাব
তুলে ধরেন। যা নিম্নরূপ: ১. আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য
গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয়
সরকার গঠন হবে। ২. যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করতে পারেবেন না। ৩. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই
জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই
বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। ৫. সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা
হস্তান্তর করবেন। ৬. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয়
নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে
অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে
হবে। ৭. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন
নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ৮. বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউ‘ই
নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না। ৯. সকল দলের প্রতিনিধিদের
নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের (ঘধঃরড়হধষ ঈড়হংবহংঁং) ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে
নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমাদের
বিশ্বাস। অনেক দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সকারের অধীনে
নির্বাচনের কথা যেহেতু পূর্ব থেকে বলে আসছেন, তাই হয়তো এ পদ্ধতিগুলো
তাঁরা পরিবর্তন করতে চান না। আমরা বলি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তো
সময়ের প্রেক্ষিতে এসেছে। ১৯৯১ সালের আগে কোনো দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার
নামে কোনো সরকার ছিল না এবং এ নামে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পদ্ধতিও
শেষ পর্যন্ত অবিতর্কিত থাকেনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন তো
স্বাধীনতার পর কোনো কালেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক সরকারের অধীনে
নির্বাচন ছিল ফরমায়েশী নির্বাচন। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কা’ই করে
নাই। তাই জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।