নতুন বছরের প্রথম দিনে জাপানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে পৌঁছেছে। তবে যারা এই দুর্যোগ থেকে বেঁচে গেছেন তারা নতুন করে পড়েছেন বিপর্যয়কর অবস্থার সামনে।
দুর্গত এসব মানুষ হিমায়িত বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছেন। সঙ্গে আছে ভূমিধসের শঙ্কাও। বুধবার (৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন দুয়েক আগে জাপানে আঘাত হানা ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ব্যাপক ঠান্ডা আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্প-পীড়িত এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে এবং এতে করে সামনে এসেছে ভূমিধসের হুমকিও।
গত সোমবার জাপানের ইশিকাওয়া অঞ্চলটি ছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, যার ফলে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় সময় ৪টা ১০ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পটি হোনশু দ্বীপের নোটো প্রদেশে আঘাত করলে সেখানকার কর্মকর্তারা উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এই ভূমিকম্পে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও অজানা, তবে বেশ কয়েকটি শহরে বহু ভবন ধসে পড়েছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো খুব প্রয়োজনীয় সাহায্য সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রয়টার্স বলছে, বুধবার ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এতে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তেমন কোনও কিছু হলে তা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া আরও অনেককে উদ্ধারের প্রচেষ্টাকে আরও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ভূমিকম্পের কারণে ইতোমধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাস্তা, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলোর দূরবর্তী অবস্থানের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা বেশ জটিল হয়ে গেছে এবং ভূমিকম্পের দুই দিন পরেও ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সম্পূর্ণ পরিমাণ অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে অবস্থিত সুজু শহরে মাত্র ৫ হাজারেরও বেশি পরিবার বসবাস করে। শহরের মেয়র মাসুহিরো ইজুমিয়া জানিয়েছেন, সাহায্যের আবেদন জানিয়ে শহর থেকে ৭২টি কল করা হলেও তাতে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জাপানি কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পে ৬২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যার ফলে ২০১৬ সালের পর থেকে জাপানে আঘাত ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে সর্বশেষটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বুধবার দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত বৈঠকের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রাথমিক ভূমিকম্পের ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এটি সময়ের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ, এবং আমি বিশ্বাস করি এখন সেই যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চলছে।’
কিশিদা বলেন, সরকার ত্রাণ বিতরণের জন্য সমুদ্র পথও ব্যবহার করছে এবং কিছু বড় ট্রাক এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
মিৎসুরু কিদা নামে ৭৪ বছরের একজন বৃদ্ধ গত সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেছেন। তবে এই দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়াজিমা শহরটি। এই শহরেরই বাসিন্দা মিৎসুরুর এখন আশঙ্কা, স্বাভাবিকভাবে জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ হবে।
অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এক কমিউনিটি বিল্ডিংয়ে অবস্থানের সময় তিনি জানান, ‘রাস্তার অবস্থা ভয়ানক। এই প্রথমবার রাস্তাগুলো এতো খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেশিরভাগ লোকই এখনও শক্তি ফিরে পায়নি।’
উল্লেখ্য, জাপান প্রতি বছর শত শত ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং দেশটির জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এতে কোনও ক্ষতির শিকার হয় না। তবে ২০১৮ সাল থেকে নোটো উপদ্বীপ অঞ্চলে ভূমিকম্পের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে গত বছর জাপান সরকারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।