জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ইমাম নিয়োগে ছাত্রলীগের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৩০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কামালউদ্দিন হল ও সালাম-বরকত হল সংলগ্ন মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ডের পূর্বে উপ-উপাচার্যের কক্ষে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কামালউদ্দিন হলের একাধিক নেতাকর্মী প্রবেশ করে নিয়োগ প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন সাক্ষাৎকার প্রত্যাশীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ইমাম নিয়োগের একটি পদের জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। যোগ্যতা হিসেবে দেশের যেকোনো মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড/ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির কামিল/ইসলামিক স্টাডিজ অথবা আরবিতে স্নাতকোত্তর পাশ অথবা স্বীকৃত কওমী মাদরাসা থেকে সমমানের ডিগ্রিসহ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে কোরআনে হাফিজ/ ক্বারিয়ানা থাকলে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের গত রোববার উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজের কক্ষে বিকাল সাড়ে ৩টায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়। মোট ৪৫ জন চাকুরিপ্রার্থীর মধ্যে ৩৭ জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছেন বলে জানা যায়।
তবে সাক্ষাৎকার দিতে আসা প্রার্থীরা জানান, বোর্ড শুরুর পূর্বে বিকাল ৩টায় উপ-উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন হল প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল, কামালউদ্দিন হলের ছাত্রলীগ নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনসহ আরও এক ছাত্রলীগ নেতা।
উক্ত পদে চাকুরি প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী জানান, ইমাম হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য কয়েকজন অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী আবেদন করেছেন। সেখানে সাভারের স্বনামধন্য মসজিদে দায়িত্বরত একাধিক আলেম আছেন। ভারতের দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা করে আসা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীও আছেন। তাদের বাদ দিয়ে এ পদে অযোগ্য কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দিলে তা যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এমনকি হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে লবিংয়ের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রার্থীরা।
এছাড়া নিয়োগ বোর্ডের পূর্বে উপ-উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের আপন ছোট ভাইকে ইমাম নিয়োগে চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা করছেন তারা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কামালউদ্দিন হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী ও তাবলীগে দায়িত্বরত একজন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে অর্থ লেনদেনের কথা শুনে আসছি। তবে ইমাম নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন যোগ্য আলেম যার এলেম-আমল-আখলাক সবদিক থেকে যোগ্য হবেন এমন একজন নিয়োগ পাবেন- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। টাকার বিনিময়ে কেউ নিয়োগ পেলে তার পেছনে আমাদের নামায হবে কিনা সন্দেহ।
তবে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, গতকাল সেসময় বাইরে বৃষ্টি ছিল। তাই রেজিস্ট্রারে গিয়ে ফিরোজ স্যারের সঙ্গে দেখা করি। তবে কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত আলাপ বা চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না।
এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা তো অনেক সময় অনেক কাজেই দেখা করতে আসে। তবে সেদিন তারা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কথা বলেনি।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, নিয়োগ বোর্ডে কামালউদ্দিন হলের প্রভোস্ট নিজেই একজন বোর্ড মেম্বার। তাই তিনি দায়িত্ব পালন করতেই অফিসে এসেছেন। এ বিষয়ে তো আমাদের কোনো এক্সপার্টিজ নাই। তাই ইমাম নিয়োগের বোর্ডে ধামরাইয়ের সবচেয়ে বড় যে মাদরাসা তার প্রিন্সিপাল প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। তাদের লিখিত পরীক্ষা হয়, ভাইভা হয়, কোরআন তেলাওয়াত, আযান সবদিক বিবেচনা করে তিনি যেভাবে সুপারিশ করেন সেভাবেই নিয়োগ দেয়া হয়। আগেরবার নিয়োগ বোর্ডের বেলায়ও এভাবে দেয়া হয়েছে, এবারো তাই ঘটেছে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগ বাংলাদেশে আর কোথাও হয় না।
© ডেইলি বাংলাদেশ