জিলহজ্জ অত্যন্ত সম্মানীত একটি মাস: আল্লামা রাব্বানী

গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুতবায় বলেন, জিলহজ্জ অত্যন্ত সম্মানীত একটি মাস। এই মাসে রয়েছে অনেক ফজিলত। এটা এমন একটি মাস, যেই মাসেই শুধু ইসলামের সমস্ত মৌলিক ইবাদত করার সুযোগ আছে। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি। জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে কুরবানিদাতার জন্য মুস্তাহাব আমল রয়েছে। সে ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত সামনে করবো ইনশাআল্লাহ।

জিলহজ্জ মাসের গুরুত্বঃ

চাঁদের উপর ভিত্তি করে আরবি মাসের গণনা শুরু হয়। মোট ১২টি মাসের মাঝে চারটি মাসকে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে জিলহজ্জ মাস অন্যতম।

পুরো জিলহজ্জ মাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের সূরায়ে ফজরের শুরুতে আল্লাহ্ তায়ালা এই জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের শপথ করে বলেন- “কসম প্রভাতের এবং ১০ রাতের।” (সুরা : ফজর, আয়াত : ১-২)

এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা কোন কোন তাফসিরকারক এ আয়াতের মাধ্যমে জিলহজ্জের প্রথম ১০ রাতকে বুঝিয়েছেন বলে মনে করেন (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৫)।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে- রাসূল ই পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট জিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোন ইবাদত নেই। [সহিহ্ বুখারী খণ্ড ২, ৪৫৭]

এই ১০ দিনের মধ্যে শেষের দু’দিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকে হাদিসের পরিভাষায় ‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমে নাহর’ বলা হয়। এ ছাড়াও দুটি ইবাদত এ মাসের প্রথম দশককে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করে তোলে। যে দুটি ইবাদত জিলহজ্জ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা সম্ভব নয়-

১. একটি হলো- হজ্জ

২. অপরটি হলো কোরবানি

আরাফার দিনঃ

এছাড়াও এ মাসে আছে -‘আরাফাহ্ ‘এর দিন। যেদিন ইসলাম হয়েছে পরিপূর্ণ। আল্ কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন বলেছেন- “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। “[সূরা মায়িদা ৩]

আরাফার দিন রোজাঃ

আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমি আল্লাহ্ সুবাহনহুতালার কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)। তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।

হজ্জ ও ওমরাহ সম্পাদন করাঃ

হজ্জ ও ওমরাহ এ দুটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-“এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ আর কবুল হজ্জের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)

তাকবির ও তাসবিহ পড়াঃ

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘এ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলার কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই এই দিন গুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবার),

তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানল্লাহ) পড়া সুন্নত। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৭৪)

তাকবীরে তাশরীক বলা- যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হল- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।

{ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

জিলহজ্জের চাঁদ ওঠার পর করণীয়ঃ

জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত, চুল, গোঁফ, নখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের লোম বা পশম না কাটা মুস্তাহাব।

এ সম্পর্কে উম্মে সালমা রাদওয়ানুতালা আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জিলহজ্জের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬)। তবে এ আমল মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।

কোরবানি আদায় করা:

যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব তারা অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। ১০, ১১ অথবা ১২ ই জিলহজ্জের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য। {ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

আর যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ্ সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন। বাহ্যিক সামর্থ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা তো আল্লাহর হাতে। সে কারণেই কোরবানি ওয়াজিব না হলেও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

 

সংক্ষেপে জিলহজ্জ মাসের ৫টি বিশেষ আমল-

১. প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা

২. চুল-নখ না কাটা (চাঁদ উঠা থেকে শুরু করে কোরবানী করা পর্যন্ত)

৩. আরাফার দিন রোজা রাখা ও ইবাদতের মাধ্যমে সময় ব্যায় করা।

৪. তাকবীরে তাশরীক বলা (৯ জিলহজ্ব থেকে-১৩ জিলহজ্ব পর্যন্ত) পর্যন্ত।

৫. স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যাদের সঙ্গে হজে যেতে পারবেন নারীরা

নূর নিউজ

গরমে মুমিনের আমল

নূর নিউজ

অপবিত্র শরীরে শিশুকে দুধ পান করানো যাবে?

নূর নিউজ