আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিবেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার মসনদে বসার আগে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু তার মন্ত্রিসভায় যাদের নিতে চাইছেন সে তালিকা দেখে হতাশ মুসলিম গোষ্ঠী। কারণ, সেখানে ইসরায়েলপন্থীদেরই আধিক্য।
কেননা, বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা এবং লেবাননে হামলায় ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ায় মার্কিন মুসলিম নেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিল।
কৌশলবিদদের বিশ্বাস, মুসলিমদের ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন তাকে মিশিগানে জিততে সাহায্য করেছিল এবং অন্যান্য সুইং রাজ্যগুলোর জয়ে রেখেছে বড় ভূমিকা।
ফিলাডেলফিয়ার বিনিয়োগকারী রাবিউল চৌধুরী পেনসিলভানিয়ায় কমলা হ্যারিস বিরোধী ‘অ্যাবান্ডন হ্যারিস’ প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে সঙ্গে তিনি ছিলেন মুসলিমস ফর ট্রাম্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। রাবিউল ইসলাম বলেছেন, ট্রাম্প আমাদের কারণেই জিতেছে এবং আমরা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্যদের মনোনীত করা নিয়ে সন্তুষ্ট নই।
ট্রাম্প ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন, যিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক। রুবিও এই বছরের শুরুর দিকে বলেছিলেন- তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাবেন না এবং তিনি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের উচিত হামাসের প্রতিটি উপাদান ধ্বংস করা।
ট্রাম্প আরকানসাসের সাবেক গভর্নর মাইক হাকাবিকে ইসরায়েলের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। হাকাবির অবস্থান পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতির পক্ষে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে তিনি ‘অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে নিন্দা জানানোয় জাতিসংঘকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলেছিলেন স্টেফানিক।
আমেরিকান মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক (এএমইইএন)-এর নির্বাহী পরিচালক রেক্সিনালদো নাজারকো বলেছেন, মুসলিম ভোটাররা আশা করেছিলেন ট্রাম্প শান্তির জন্য কাজ করবে এমন কর্মকর্তাদের মন্ত্রিসভায় মনোনীত করবেন। তবে এর কোনও লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আমরা খুবই হতাশ। মনে হচ্ছে, এই প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে নিওকনজারভেটিভ এবং অত্যন্ত ইসরায়েলপন্থী, যুদ্ধপন্থী লোকদের দিয়ে পূর্ণ। শান্তি এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ব্যর্থতা এই প্রশাসন।
মিনেসোটা ইউনিভার্সিটি, টুইন সিটিসের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনকে সমর্থন করা অ্যাবান্ডন হ্যারিস প্রচারাভিযানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাসান আবদেল সালাম বলেছেন, ট্রাম্পের প্রশাসনে মনোনয়নের পরিকল্পনা অবাক করার মতো নয়। তবে তার আশঙ্কাকেও হার মানিয়েছে এই প্রশাসন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে ইহুদিবাদীদের নিয়ে বাড়াবাড়ির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। আমরা সবসময়ই সন্দেহপ্রবণ ছিলাম। ট্রাম্প প্রশাসন কোথায় যাবে তা দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা। তবে মনে হচ্ছে, আমাদের সম্প্রদায়কে নিয়ে খেলেছে তারা।
ট্রাম্পের কয়েকজন মুসলিম এবং আরব সমর্থক আশা করেছিলেন যে, ট্রাম্পের আমলে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা রিচার্ড গ্রেনেল এবার বেশ বড় পদ পাবেন। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মুসলিম এবং আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে যোগাযোগ রক্ষা করা গ্রেনেলকে পরবর্তী কয়েকটি ঘটনার সাপেক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেখার আশাও ছিল তাদের।
সূত্র: রয়টার্স