ড. তারেক শামসুর রেহমান থেকে মহসিন খান

সৈয়দ শামছুল হুদা

আমরা জাতীয়ভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর কিছুটা প্রমাণ বহন করে উপরের দুটি নাম। ড. তারেক শামসুর রেহমান একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছিলেন। কন্ট্রাক্টশন নিয়ে কাজ করতেন। উত্তরার বাসায় উনার নির্মম মৃত্যু হয়। তিনি একা একা নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন। বাসায় এক পা বাথরুমে অপর পা বাহিরে। এ অবস্থায়ই পরে ছিল উনার লাশ। দুদিন পর খবর হয় তার মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু পছন্দ করেননি জনাব মহসিন খান। প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক তিনি। সম্পদের অভাব ছিল না। কিন্তু যে সব অভাব ছিল তার সমাধান করার বয়স ছিল না। তাই তিনি লাইভে এসে নিঃসঙ্গ জীবনের অবসান ঘটাতে প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করেন। ঠান্ডা মাথায় লাইভে এসে কথা বলেন। নিজের অসহায়ত্ব ও সমস্যার কথা বলেন। বাস্তব জীবনের নির্মমতার কথা তুলে ধরেন। অতঃপর লাইভে থেকেই মাথায় গুলি করেন। ১৬মিনিট লাইভে কথা বলেন। তারপরও মোবাইল লাইভটি ১ঘন্টা ১৩মিনিট পর্যন্ত চলমান থাকে। এ ঘটনার মাধ্যমে বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে।

দেশে চরম পর্যায়ের স্বার্থপর সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। কে কাকে ঠকিয়ে নিজে উপরে উঠে যাবে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। যে যত বেশি অন্যকে ধোকা দিতে পারে তাকেই সমাজে সফল মানুষ মনে করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র চলছে এক ধরনের স্বার্থপরতার শিক্ষা। অন্যকে ধোকা দেওয়া, প্রতারণা করা, যে কোন মুল্যে পয়সা উপার্জন করাকেই এখন সফলতার চাবিকাঠি মনে করা হচ্ছে। জেলখানা বলেন, হাসপাতাল বলেন, আদালত বলেন, সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বলেন সর্বত্র একই চর্চা হচ্ছে। মানুষকে ঠকাও, নিজে বড় লোক হও। এমনকি নিজের স্বার্থে প্রয়োজনে বাপ-মাকে ছুঁড়ে মেরে ফেলো। গত ১০/১২বছরে এমন সব নির্মম ঘটনা দেখেছি যা একসময় কল্পনারও বাইরে ছিল। সমাজ ও রাষ্ট্র মানুষে মানুষে ব্যবধান গড়ে তুলেছে। প্রভু ও দাসে এই দুই শ্রেনিতে বিভক্ত হয়ে গেছে সমাজ। কারো কাছে অঢেল পয়সা, কেউ কপর্দকশুন্য।

মহসিন খান আত্মহত্যা করেছেন প্রথমত: নিসঃঙ্গতার জন্য। এর জন্য দায়ী এদেশের সেই সব এনজিওরা যারা বাল্যবিবাহ নিয়ে সারাদেশে মারাত্মক আকারের ক্যাম্পেইন করছে। সেই সকল জানোয়ার অফিসার দায়ী যারা ১৬বছরের মেয়েকে বিয়ে দিলে তার বাবা-মাকে ধরে নিয়ে আসে। ঢাকা শহরে লাখো পরিবার আছে যাদের ঘরে এখন সন্তান নেই, অথচ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তাদেরকে দেখার কেউ নেই। তারা সময়মতো বিয়ে করতে পারেনি। তথাকথিত নারীবাদিরা সন্তান নেয়নি। নানা প্রাসঙ্গিকচাপ সৃষ্টি করে যারা অধিক সন্তান নেয় তাদেরকে সমাজে হেয় চোখে দেখা হয়। ইত্যাদি অপকর্ম করে এখন মহসিন খানরা আত্মহত্যা করেন। পরিবারে এদের দেখার কেউ ছিল না। এতে খুব একটা আফসোস হয় না। উনারা পরিবারটা এভাবেই গড়েছেন। নিজের আত্মীয়-স্বজনকে নানা স্বার্থে এক সময় দূরে ঠেলে দিয়েছেন।

ধর্ম-কর্মকে এক শ্রেনির তথাকথিত শিক্ষিত মানুষরা পশ্চামগামি শিক্ষা মনে করে। তাদের মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা নেই। তারা মানুষের সাথে সারাটা জীবন প্রতারণা করে বুড়ো হয়। বুড়ো বয়সে যখন প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ তার দিকে ধেয়ে আসে তখনই মহসিন খানরা আত্মহত্যা করে। এ শহরে আরো লাখো লাখো মহসিন খান আছে। সকলেই হয়তো তার মতো সাহসী নয় বলে এভাবে আত্মহত্যা করে না।

এ সমাজকে রক্ষা করতে হলে, আবারও ধর্মের সুশিক্ষার দিকে ফিরে আসতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে। মা-বাবার প্রতি সম্মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শিশুর অন্তরে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শিক্ষিত করতে হবে। একজন ওসি প্রদীপকে ২০০+ মানুষকে হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন তার ফাঁসি হলেই কি আর না হলেই কি? সারাটা জীবন অপরাধ করে, ভুল পথে চলে, শেষ জীবনে এসে বুযুর্গ সেজে লাভ কি?

দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। গত দেড়-দু বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে প্রায় ১শ’র ওপরে। আমরা এদেরও খোঁজ খবর নিইনি। সমাজে অবৈধ পথে অর্থ ‍উপার্জনের সব পথ বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি অফিসে অফিসে এমন সব জানোয়াররা বসে আছে যাদের মধ্যে ন্যুনতম সুশিক্ষা নেই। মানুষকে এরা কুকুর-বিড়ালের চেয়েও অধম মনে করে।

গোটা দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্ব, অস্থিরতা, অভাববোধ কাজ করছে। কিছু মানুষ অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছে। আর বিশাল একটি অংশ ধুকে ধুকে মৃত্যূর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সমাজ অপরাধীদের অপরাধকে ঘৃনার চোখে না দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। নিজেও বেশি করে অপরাধ করার প্রেরণা লাভ করছে।

এ সমাজে দু’টি ভালো জিনিসকে খারাপ চোখ দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নিঃসঙ্গতা দূরীকরণে অথবা একান্ত প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে। আর একটি অপরাধের জায়গা হলো, একাধিক সন্তান। আমাদের তথাকথিত নারী নেত্রীরা এ ক্ষেত্রে অগ্রগামি। অথচ জীবনের রূপ শেষে এরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগি হচ্ছে। চোখের সামনে সমস্যা দেখেও তারা শিক্ষা গ্রহন করছে না। লাখো পরিবারে বৃদ্ধা মায়ের খবর নেওয়ার কেউ নেই। আদূরের এক সন্তান বিদেশ-বিভুঁয়ে বউ-মাইয়া নিয়ে মউজ মাস্তিতে দিন কাটাচ্ছে। আর দেশে বসে মরছে বৃদ্ধ বাবা-মা।

আসুন, সমাজ নিয়ে চিন্তা করি। মহসিন খানদের আত্মহত্যা থেকে শিক্ষা গ্রহন করি। আগামি প্রজন্মকে রক্ষা করি। দেশকে বাাঁচাতে চেষ্টা করি। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করি। দীপুমনিদের শিক্ষাবিরোধী চক্রান্ত প্রতিহত করে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনি। সকল প্রকার অবৈধ ইনকামের পথ বন্ধ করতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন করি। জালেমদের কণ্ঠ চেপে ধরি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম কার্ড প্রতারণা এড়াতে করণীয়

আনসারুল হক

কাল কুবল’ পুরষ্কারে ভূষিত হওয়ায় ড. ইউনূসকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিনন্দন 

নূর নিউজ

যা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী

নূর নিউজ