নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় বিএনপি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে আছে বিরোধী জোট। সামনের দিনে এই আন্দোলন জোরদার করতে রাজধানীতে চোখ বিএনপি’র। নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে সামনের দিনে রাজধানীতে আন্দোলন জোরদার করতে চাইছেন নেতারা। এজন্য নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। শীর্ষ নেতারা মহানগর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। সক্রিয় নেতাদের সামনে আনা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। পদে নেই এমন ত্যাগী নেতাদেরও সামনে আনা হচ্ছে।
তাদেরকে আন্দোলনে সক্রিয় হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সমন্বয় কমিটিতে তাদের রাখা হচ্ছে। ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কার্যক্রমও মনিটরিং করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে যেসব নেতা দায়িত্ব পালনে সমস্যার মুখে পড়ছেন তাদের সরিয়ে অন্য নেতাদের দায়িত্ব দেয়ার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে শীর্ষ নেতাদের।
এদিকে ঢাকার শীর্ষনেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে হাইকমান্ড। কঠোর আন্দোলনের লক্ষ্যে প্রস্তুত হতে দিচ্ছেন কড়া বার্তা। কাউকে কাউকে ইতিমধ্যে সতর্ক বার্তাও দেয়া হয়েছে। গত সোমবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও বুধবার বিকালে বিএনপি’র সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্র মানবজমিনকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে আগামী মাসেই ঢাকায় লাগাতার কর্মসূচির রোডম্যাপও প্রস্তুত করেছে বিএনপি। ঢাকায় মহাসমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিসহ ভিন্ন ধরনের কর্মসূচির কথাও ভাবছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে চলতি মাসেই বিভিন্ন কর্মসূচিকে প্রস্তুতি হিসেবেও দেখেছেন তারা। আগামী মাসে লাগাতার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিতে দলের শীর্ষনেতা ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষনেতার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। গত ২৯শে জুলাই ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির ঘাটতির বিষয়টি মাথায় নিয়েই আবারো ঢাকার আন্দোলনে চোখ রাখছেন সবাই। লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার পর কোথায় কে কোন দায়িত্ব পালন করতেন তারও তালিকা করছে বিএনপি। গ্রেপ্তার, দমন-পীড়নের বিষয়টি মাথায় রেখে একাধিক শীর্ষনেতাকে সমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়েছে।
গত কয়েকদিনে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে ধাপে ধাপে বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে ঢাকার আন্দোলন প্রস্তুতির বিষয়টি উঠে আসে। সেপ্টেম্বর ঘিরে অনেককেই নির্দিষ্ট করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকার কোনো কোনো পয়েন্টে অবস্থান ও ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা হলে সেক্ষেত্রে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে তার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের বাধা আসলে নেতাকর্মীদের কি করণীয় তাও জানোনো হয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার বার্তা দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। একই সঙ্গে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দপ্তর নজরদারিতে রাখছেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর মাসেই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে ইতিমধ্যে একাধিক রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে বিএনপি। সরকারের পতন নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচি দেবে দলটি। বিএনপি’র সম্ভাব্য ঘোষিত কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখতে চান শীর্ষ নেতারা। এজন্য কর্মসূচির বিকল্প কর্মসূচি হাতে নিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলন লাগাতার করতে চান তারা।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মানবজমিনকে বলেন, আগামী মাসেই আন্দোলনের ফসল উঠবে। বর্তমান সরকারকে হটাতে বিএনপি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকবে। এজন্য ঢাকায় জোর দেয়া হচ্ছে। মূলদলের পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলো লাগাতার কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে ২৯শে জুলাইয়ের মতো আর হবে না। এবার সবাই সতর্ক। সবাইকে সর্তক বার্তা দেয়া হয়েছে। কঠোর হুঁশিয়ার দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২৯শে জুলাই ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনেকেই না বুঝে সরকারের চক্রে পড়েছে। সরকার সব সময়ই চাইছে বিএনপি যাতে মাঠে নামতে না পারে। সরকারের এতো অত্যাচার, মামলা, হামলা সত্ত্বেও আমরা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে টিকে আছে। এবার আর সেই সুযোগ পাবে না। বাধা দিলে তাৎক্ষণিকভাবেই পাল্টা জবাব দেবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে হটাতে হবে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য বড় রকমের ঝাঁকুনি দরকার, যুদ্ধ দরকার। সুনামির মতো অভ্যুত্থান তৈরি করে সরকারকে সরাতে হবে।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল মানবজমিনকে বলেন, অতীতের ব্যর্থতাকে আমরা ওভারকাম করছি। ঢাকায় বিএনপি’র শক্তি প্রদর্শন ও সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে সাম্প্রতিককালে মহানগরগুলোতে পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে। সেক্ষেত্রে সিনিয়র নেতাদের ঢাকার বাহিরের কর্মসূচিতে দেয়া হচ্ছে। যাতে মহানগর দু’টির নেতারা নিজেরাই কর্মসূচি পালন করতে পারেন। এটা থেকে বোঝা যায় ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে ঢাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। তিনি বলেন, আমাদের কিছু নেতার অতি উৎসাহের কারণে আমরা এর আগের আন্দোলনে (২৯শে জুলাই) সরকারের ট্র্যাকে পড়েছিলাম।
এই সরকার একটা প্রতারক সরকার। তারা নিজেরা গাড়িতে আগুন দিয়ে আমাদের উপরে দায় চাপানোর সুযোগ পেয়েছিল। তারা নিজেরা বোমাবাজি করে আমাদের উপরে দায় চাপিয়েছে। এবার আমরা সেই সুযোগটাকে নষ্ট করে দিয়েছি। আমরা মার খাচ্ছি, গ্রেপ্তার হচ্ছি, কিšুÍ আমরা কাউকে মারতে যাচ্ছি না। অশান্তি করছি না। এতে মানুষ আশান্বিত হয়েছে। দেশের মানুষ মনে করছে যে, বিএনপি তাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাশার পথ পরিক্রমায় আছেন। এখান থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা নেই। এসব কারণে আমরা মনে করি একটা সময় বিশাল জনগোষ্ঠী এসে এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে।
সূত্র: মানবজমিন