শৈশব ও বার্ধক্য- মানুষের দুইটি দুর্বলতম অবস্থানের মাঝে যৌবনকাল রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা। এ বয়সটিতে মানুষ শক্তিমত্তা, বিবেক, বুদ্ধিতে পরিণত হয়। এই বয়সটিই মূলত পার্থিব জীবনের ভিত্তি এবং পরকালে মুক্তি লাভের প্রধান সময়।
মানুষের প্রথম দুর্বলতা অর্থাৎ শৈশবের পরে আসে যৌবনকাল। এই সময়ে মানসিক দৃঢ়তা ও উচ্চাকাঙ্খা মানুষকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। এই বয়সেই মানুষ বিল্পব ঘটানোর মতো সাহসিকতা দেখিয়ে থাকে।
যুবক বয়সে শিরক ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে নিজের জাতির মাঝে একত্ববাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। তার সম্পর্কে তার জাতি বলেছিলো- ‘তাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে, তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। ( সূরা আম্বিয়া, (২১), আয়াত, ৬০)
যুবকরা অনেক ক্ষেত্রে বয়স্কদের ক্ষেত্রে সত্যকে সহজে উপলব্ধি করতে পারে এবং তারা সত্য পথ অবলম্বনে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা আসহাবে কাহাফ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা তো ছিল কয়েকজন যুবক; তারা তাদের রবের উপর ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের হেদায়াত বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। (সূরা কাহাফ, ১৮, আয়াত, ১৩)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের মাধ্যমে জানিয়েছেন, যুবকেরা বয়স্কদের ক্ষেত্রে সত্য গ্রহণে অগ্রগামী হয়ে থাকে। তাইতো প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাসস্থাপনকারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন যুবক।
কিয়ামতের কঠিন দিনে যখন কোনো ছায়া থাকবে না, সেই মুর্হূতে আল্লাহ তায়ালা আরশের ছায়ায় যাদের আশ্রয় দিবেন, তাদের অন্যতম হবেন- এমন যুবক যার যৌবনকাল কেটেছে আল্লাহর ইবাদতে, নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে যেই যুবক আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।
তরুণ-যুবকেরা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে সবসময় স্নেহ-হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করেছেন। তরুণদের সাহস বাড়িয়েছেন এবং তাদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এর কারণেই যুবক সাহাবিদের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে একটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। যারা বিশ্বব্যাপী আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন।
হজরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা শক্তিশালী উঠতি যুবক ছিলাম -অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম। তখন আমরা কোরআন শেখার আগে ঈমান শিখেছি। এরপর আমরা কোরআন শিখেছি এবং এর মাধ্যমে আমরা ঈমানকে আরো বৃদ্ধি করেছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
তরুণ-যুবকদের হৃদয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান ধারণে গুরুত্ব দিতেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি আল্লাহর বিধিনিষেধ রক্ষা করবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহর হক রক্ষা করবে, আল্লাহকে তোমার সামনে পাবে। তুমি কিছু চাইলে একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইবে, আর কোন সাহায্য প্রার্থনা করলে শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। (সুনানে তিরমিজি)
তরুণদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন আল্লাহর রাসূল। কখনো কখনো তাদের হাত ধরে শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। মুয়াজ বললেণ, আল্লাহর কসম! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিবো না, যা তুমি প্রত্যেক নামাজের পর পড়বে। মুয়াজ বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি পাঠ করবে, হে আল্লাহ, আপনার স্মরণে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ও আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন। ( বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)
যেকোনো কথা বলা ও শেখানোর ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ। তার স্নেহের পরশ পেতে তরুণ সাহাবিরা নিজে থেকেই আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে শিখতে চাইতেন, বলতেন, ‘আমাদেরকে শিক্ষা দিন’।
হজরত ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এ বাণী থেকে অর্থাৎ, কোরআন থেকে শিক্ষা দিন। তারপর তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন, নিশ্চয় তুমি একজন শিক্ষিত ছেলে হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি তরুণদের স্নেহ করতেন, তাদের পরিবারের খোঁজ নিতেন। তরুণ সাহাবিদের কেউ অসুস্থ হলে তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন। হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার আমি চোখের রোগে আক্রান্ত হলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাকে দেখতে এলেন। (মুসনাদে আহমাদ)